ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়া সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার পর এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। স্থানীয় সময় সোমবার (৩ মার্চ) একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, যতক্ষণ না ট্রাম্প মনে করবেন দেশটির (ইউক্রেনের) নেতারা শান্তির প্রতি অঙ্গীকারের সদিচ্ছা দেখাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সহযোগিতা বন্ধ থাকবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ফক্স নিউজ বলেছে, ‘এটি স্থায়ীভাবে সহযোগিতা বন্ধ নয়, এটি সাময়িক সময়ের জন্য।’
যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সামরিক সরঞ্জাম এখন ইউক্রেনে নেই, সেগুলো এই সাময়িক সহযোগিতা বন্ধের আওতায় পড়বে। এর মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজ বা জাহাজে ইউক্রেনের পথে রয়েছে এবং ইউক্রেনে প্রবেশের অপেক্ষায় পোল্যান্ডে রয়েছে, সেসব অস্ত্র।
সাময়িক এই অস্ত্র সহযোগিতা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা প্রদান স্থগিত করা নিয়ে তিনি আলোচনা করেননি— হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এ কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরই এ খবর প্রকাশিত হয়। তবে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ওয়াশিংটনের সহযোগিতার বিষয়ে জেলেনস্কির আরো কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আকস্মিক হামলা চালায় রাশিয়া। তিন বছর আগে দেশটিতে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনকে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম এবং আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি অনেক, অনেক দূরে। তার এমন মন্তব্যের বিষয়ে সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরপরেই ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং রাশিয়ার হাত থেকে ইউক্রেনকে রক্ষায় চার দফা কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্য দেশগুলো একটি জোট গড়ার উদ্যোগ জোরদার করবে এবং ইউক্রেনের প্রতি তাদের এই সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
লন্ডনে ১৮ নেতার এক সম্মেলনের পরে স্টারমার বলেন, আমরা ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে আছি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় অন্য নেতারাও এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলেও জানান তারা। কেইর স্টারমার বলেন, আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে জরুরি শান্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছি। এখন সবার একযোগে কাজ করার পালা।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেছেন, ইউরোপকে পুনরায় অস্ত্রে সজ্জিত করার জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
একই ধরনের মত দিয়েছেন ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুত্তে। তিনি বলেছেন, বৈঠকে ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের যত দিন দরকার তত দিন লড়াই অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অগ্রসর হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
সম্মেলনের পর ভলোদিমির জেলেনস্কি রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত ছিলেন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ