ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তির শর্তাবলীতে সম্মত হয়েছে। কিয়েভের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু সংশোধনীর সঙ্গে একমত হয়েছি এবং এটিকে একটি ইতিবাচক ফলাফল হিসেবে দেখছি।’
ইউক্রেনীয় ওই কর্মকর্তা জানান, যেসব বিষয় গ্রহণযোগ্য ছিল না, সেগুলো চুক্তির খসড়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তি কীভাবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও শান্তিতে অবদান রাখবে তা এখানে এখন পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেনি যে চুক্তির শর্তাবলী চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে কিনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আশা করছেন এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।
তিনি আরো বলেন, চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেন লড়াই করার অধিকার পাবে। তারা খুবই সাহসী।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ এবং সামরিক সরঞ্জাম ছাড়া, এই যুদ্ধ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যেত।’ ইউক্রেনে মার্কিন সরঞ্জাম এবং গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত... আমাদের একটি চুক্তি করতে হবে, অন্যথায় এটি চলতেই থাকবে।’
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘যেকোনো শান্তি চুক্তির পরে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা প্রয়োজন হবে, তবে তা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে ‘
গত সপ্তাহে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘ডিক্টেটর’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং যুদ্ধ শুরু করার জন্য রাশিয়াকে নয় বরং ইউক্রেনকে দায়ি করেছেন। ইউক্রেনের নেতা ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদের জন্য মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর এই মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। তখন জেলেনস্কি বলেছিলেন, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার তৈরি ভুল তথ্যের জায়গায় বাস করছেন।
তিন বছর আগে মস্কো পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ট্রাম্প ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জোর দিয়ে আসছেন। মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৩০০ বিলিয়ন থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সেই অর্থ ফেরত পেতে চাই। আমরা দেশটিকে একটি খুব বড় সমস্যার সময় সাহায্য করছি... কিন্তু আমেরিকান করদাতারা এখন তাদের অর্থ ফেরত পেতে চলেছেন।’
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘মঙ্গলবারের খনিজ চুক্তিটি ছবির একটি অংশ মাত্র।’
ইউক্রেনীয় সূত্রের মতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির কাছ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার কিছু কঠিন দাবি থেকে সরে আসতে হয়েছে এবং এই চুক্তির জন্য আরো আলোচনার প্রয়োজন পড়বে। তবে একটি নজির স্থাপন করা হয়েছে, ট্রাম্প যুগে মার্কিন সাহায্যের সঙ্গে কিছু শর্ত যুক্ত থাকে।
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প এবং তার পররাষ্ট্রনীতি দল আগামী চার বছর ধরে তাদের আমেরিকা প্রথম নীতিগুলি বিশ্বজুড়ে প্রয়োগ করবে।
ইউক্রেনের সংবাদ সাইট ইউক্রেনস্কা প্রাভদা জানিয়েছে, খনিজ চুক্তিটি ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্বাক্ষর করবেন। নিউজ সাইটের অর্থনীতি ইউনিট ইপি জানিয়েছে, দুটি দেশ একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠনেও সম্মত হয়েছে।
ইউক্রেনে লিথিয়াম এবং টাইটানিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং খনিজ পদার্থের বিশাল মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি বিশাল পরিমাণে কয়লা, গ্যাস, তেল এবং ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ