ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি অবসানের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার তিনি বলেছেন, শনিবার দুপুরের মধ্যে হামাস যদি সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে তিনি এ চুক্তি শেষ করে দিতে পারেন।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনে হামাসের পক্ষ থেকে শর্ত অনুযায়ী জিম্মি মুক্তি স্থগিত করার কথা জানানোর পর ট্রাম্প এমন হুমকি দিলেন।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়। এর মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় টানা ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলার লাগাম টানা হয়। শর্ত মেনে এরই মধ্যে পাঁচ দফায় জিম্মি ও বন্দিবিনিময় করেছে হামাস ও ইসরায়েল।
তবে ট্রাম্পের এক ঘোষণায় পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোলাটে হয়ে ওঠে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর ট্রাম্প জানান, গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। খালি করা হবে গাজা উপত্যকা। সেখানকার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যদি শনিবার ১২টার মধ্যে সব জিম্মিকে ফেরত দেওয়া না হয়, আমার মনে হয়, এটাই উপযুক্ত সময়। আমি বলব, এটা (যুদ্ধবিরতি) বাতিল করো।’
এএফপির খবরে জানা যায়, হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি জিম্মি মুক্তির কথা রয়েছে। তবে পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলের কারণে যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেরি হয়েছে। তাঁদের গুলির লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। তাই পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে।
পরে আরেক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ‘নির্ধারিত বন্দিবিনিময়ের পাঁচ দিন আগে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘোষণা (স্থগিতের) দিয়েছিল হামাস। এর উদ্দেশ্য ছিল চুক্তির শর্ত পূরণের জন্য যাতে (ইসরায়েলি) দখলদারির বিরুদ্ধে চাপ তৈরির জন্য মধ্যস্থতাকারীরা পর্যাপ্ত সময় পান। দখলদারেরা চুক্তির শর্ত মেনে চললে পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে বন্দিবিনিময়ের কাজ এগিয়ে নিতে দরজা খোলা থাকবে।’
ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী যেকোনো সম্ভাব্য দৃশ্যপটের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
গাজা খালি করার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলছে জাতিসংঘ। অনেক বিশ্লেষকেরও একই মত। ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এ প্রস্তাব।
কিন্তু ট্রাম্প অনড়। সোমবার তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জর্ডান ও মিসর যদি গাজা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তিনি ‘সম্ভবত’ দেশগুলোর জন্য সহায়তা বন্ধ করে দেবেন।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে বলেছেন, আরব দেশগুলো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরানো এবং উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া–বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছে। এরপরই ট্রাম্প এমন হুঁশিয়ারি দিলেন।
এদিকে চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক করার কথা রয়েছে।