কিউবাতে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত কারাগার গুয়ান্তানামো বে-তে উচ্চ ঝুঁকির অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তৃতীয় ফ্লাইট পাঠিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম কারাগারটি পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তার অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে সফরের বিস্তারিত শেয়ার করেছেন।
ওই পোস্টে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ‘নিষ্ঠুর গ্যাং সদস্যরা আর আমাদের দেশে নিরাপদ আশ্রয় পাবে না।’
তবে নোম কতজনকে সামরিক কার্গো জেট থেকে নামানো হয়েছে অথবা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী বা তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের অপরাধের সন্দেহ রয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।
গুয়ান্তানামো বে অপারেশন তদারকির দায়িত্বে থাকা ইউ এস সাউদার্ন কমান্ড ফ্লাইটের সংখ্যা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গত শনিবার তারা ভয়েস অব আমেরিকা-কে জানান, বর্তমানে আটক কেন্দ্রে ছত্রিশ জনেরও বেশি ব্যক্তির থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাউথকম আরো বলেন, তারা প্রতিরক্ষা বিভাগের নির্দেশ অনুসারে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান সমর্থন করার জন্য প্রস্তুত এবং যেকোনো নতুন আগতদের আন্তর্জাতিক মানবিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিরাপদ এবং মানবিকভাবে আচরণ করা হবে।
গত শুক্রবার আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নসহ অভিবাসীদের অধিকার গোষ্ঠীগুলো ডিএইচএস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পেন্টাগনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যাতে গুয়ান্তানামো বে কারাগারে প্রেরিত ব্যক্তিদের তথ্য এবং তাৎক্ষণিক যোগাযোগের দাবি করা হয়েছে।
দলগুলো বলেছে, সংবিধান, ফেডারেল এবং আন্তর্জাতিক আইন সরকারকে গুয়ান্তানামোকে আইনগত ব্ল্যাক হোল হিসেবে ব্যবহার করতে নিষিদ্ধ করেছে। অতএব, আমরা অনুরোধ করছি যে সরকার আমাদের সংস্থাগুলোকে গুয়ান্তানামোতে আটককৃত অ-নাগরিকদের প্রতি প্রবেশাধিকার প্রদান করুক, যাতে ওই ব্যক্তিরা আইনজীবীর সাহায্য পেতে পারেন, এবং যাতে উকিলরা এবং জনসাধারণ বুঝতে পারে যে, সরকার কোন শর্তগুলোর অধীনে তাদের আটক করছে।
গত শুক্রবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ অন্য একটি পোস্টে নোম বলেন, তিনি গুয়ান্তানামো বে-তে গিয়ে কিছু কাজ পরিদর্শন করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সবচেয়ে খারাপ এবং অবৈধ অপরাধীদের রাখার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা সেখানে বেশি দিন থাকবে না। পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে আমেরিকাকে আবার নিরাপদ করতে তার কঠোর পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান।
নোমের গুয়ান্তানামো বে সফর উচ্চ-হুমকিসম্পন্ন অবৈধ অভিবাসীদের দ্বিতীয় ফ্লাইট আগমনের একদিন পরেই হলো। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অবৈধ অভিবাসীদের খুনি ও ভয়ংকর অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত সদস্য হিসাবে বর্ণনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভয়েস অব আমেরিকা-কে বলেন, গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্গো বিমানটিতে ১৩ জন বড় মাপের অপরাধীকে নিয়ে আসা হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্মকর্তারা জানান, গত মঙ্গলবার আগত ১০ জন অভিবাসী ছিলেন ট্রেন ডি আরাগুয়ার সদস্য। এটি একটি ভেনেজুয়েলান স্ট্রিট গ্যাং, যা আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয়। কর্মকর্তারা কখন বা কীভাবে তাদের প্রথমে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল, তা বলেননি।
হোয়াইট হাউস ট্রেন ডি আরগুয়াকে বিদেশী সন্ত্রাসী সংস্থা হিসাবে চিহ্নিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
এদিকে বারাক ওবামা এবং জো বাইডেনের অধীনে গণতান্ত্রিক প্রশাসন ২০০২ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত ডিটেনশন ক্যাম্পটি বন্ধ করার চেষ্টা করেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর, যা ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার কিছুদিন পর শুরু হয়।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের গুয়ান্তানামোকে অভিবাসীদের জন্য একটি আটক কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করার পদক্ষেপের সমালোচনা করে। তাদের কয়েকটিগোষ্ঠী সতর্ক করে যে, এটি মানবাধিকার বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে।
আমারবাঙলা/জিজি