যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার তার অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রয়োজনে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। পরের দিন মঙ্গলবার ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে পানামা।
ট্রাম্প যদি শক্তি প্রয়োগ, বিশেষ করে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে পানামা খাল দখলের চেষ্টা করেন, তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের নীতিবিরুদ্ধ। তা ছাড়া যুদ্ধ করাটা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত নীতিরও বিরোধী। কারণ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের যুদ্ধ করার বিরোধিতা করে আসছেন। তাই হঠাৎ তিনি যদি পানামা খাল দখলের জন্য একটি বড় রকমের যুদ্ধ শুরু করেন, তা জনসমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হতে পারে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার (১৯৭৭-৮১) পানামা খাল পানামা সরকারের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পানামা খাল চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে পাস হয় ১৯৭৮ সালে। জিমি কার্টার এই চুক্তির পক্ষে সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সদস্যের ভোট আদায় করতে পেরেছিলেন।
পানামা খাল পানামা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়াটাকে ন্যায্য মনে করতেন জিমি কার্টার। ওয়াশিংটন যেহেতু তখন পর্যন্ত মধ্য আমেরিকায় আধা ঔপনিবেশিক নীতি অনুসরণ করত, তাই জিমি কার্টারের পানামা খাল ফেরত দেওয়ার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল।
জিমি কার্টার পানামা খাল চুক্তি সই করেছিলেন-এ কথা বলার পাশাপাশি এটাও বলা দরকার যে পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের প্রেসিডেন্টরাই চুক্তিটির শর্ত মেনে চলেছেন। এসব প্রেসিডেন্টের মধ্যে রয়েছেন রোনাল্ড রিগ্যান, জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন। বিল ক্লিনটনের দ্বিতীয় মেয়াদের মাঝামাঝি ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পানামা খাল পরিচালনার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পানামা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ‘কোনো সামরিক অভিযান সফল করার জন্য প্রতি এক হাজার বাসিন্দার বিরুদ্ধে ২০ জন যোদ্ধা দরকার হয়।’ সেই হিসাবে পানামার বর্তমান জনসংখ্যা অনুসারে পানামা খাল দখলে নেওয়ার জন্য যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ৯০ হাজার সেনা মোতায়েন করতে হবে। ট্রাম্প এত বড় পরিসরে কোনো যুদ্ধ শুরু করলে তাঁকে চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে।
অন্যদিকে পানামায় সামরিক অভিযানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে প্রস্তাব পাস করা লাগবে। দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এই ধরনের প্রস্তাব পাস করার জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন পেতেও ট্রাম্পকে হিমশিম খেতে হবে। কারণ, উভয় দলের অনেক কংগ্রেস সদস্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে পানামা খাল দখলের বিরোধিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পানামা খালের দখল নিয়ে যুদ্ধ শুরু হলে সেটির ধাক্কা বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে। এই খাল দিয়ে প্রতিবছর বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৬ শতাংশ হয়ে থাকে। অথচ এরই মধ্যে লোহিত সাগরের সুয়েজ খালে দিয়ে চলাচলকারী জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যকে অস্থির করে তুলেছে ইয়েমেনের হুতিরা। এ খাল দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ১২ শতাংশ বাণিজ্য হয়ে থাকে।
প্রথাগত চিন্তার বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ওপরই তাঁর রাজনৈতিক জীবন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তাই বলে পানামা খাল দখলের জন্য সামরিক শক্তির ব্যবহার হবে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ—এ ধরনের অভিযান ব্যর্থ হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
আমারবাঙলা/জিজি