মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় শপথ গ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের পরপরই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। এক কথায় বলা চলে নির্বাহী আদেশের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। তার এসব নির্বাহী আদেশে খোদ আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে দেশটিতে থাকা অভিবাসীরা শঙ্কায় পড়েছেন।
বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট শুরুতেই বাতিল করেন পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ। এ ছাড়া, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারসহ একাধিক আদেশে সই করেন ট্রাম্প।
ওয়াশিংটনের কংগ্রেস ভবনের ক্যাপিটল রোটুন্ডায় শপথ নেওয়ার পর তিনি ওভাল অফিসে গিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তার এ সিদ্ধান্তগুলো নতুন প্রশাসনের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
এদিকে তার শপথে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্টরাসহ তার প্রতিদ্বন্দ্বি কমালা হ্যারিসও ছিলেন। অভিষেকের ভাষণে তিনি নতুন আমেরিকা গড়ার সংকল্পের কথা জানান। এ সময় তিনি বাইডেনের শাসনামলের সমালোচনা করেন। অন্যদিকে আমেরিকার শাসককে বিশ্বনেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। ট্রাম্পকে সহায়তার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন তারা।
নির্বাহী আদেশের ঝড়-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার একটি বড় সিদ্ধান্তে সই করেছেন ট্রাম্প। এই আদেশ অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই সংস্থা থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে এবং সব ধরনের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করবে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। কিছু দেশ রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছে, বিশেষ করে চীন। তিনি আরো বলেন, আমাদের টাকা ছিঁড়ে খাচ্ছে তারা। ২০২১ সালেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; যা বাইডেন প্রশাসন এসে পরিবর্তন করেছিল। এবার তিনি আবার সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করলেন।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসা: ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা। কিন্তু ট্রাম্পের মতে, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদক। আমরা আরো বেশি ড্রিলিং করব। ট্রাম্প এদিন জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠানোর আদেশেও সই করেছেন।
ক্যাপিটল দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা ঘোষণা: ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের দাঙ্গার ঘটনায় অভিযুক্ত দেড় হাজারের বেশি ব্যক্তিকে ক্ষমা করেছেন ট্রাম্প। তার মতে, এদের প্রতি জাতীয় পর্যায়ে অন্যায় করা হয়েছে। যারা কারাগারে রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কট্টর ডান গোষ্ঠী সদস্যদের সাজা কমানো: ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ‘ওথ কিপারস’ এবং ‘প্রাউড বয়েজ’র মতো কট্টর-ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের সাজা কমানোর আদেশেও সই করেছেন। এর ফলে ২২ বছরের জেল হওয়া প্রাউড বয়েজ গোষ্ঠীর সাবেক প্রধান হেনরি এনরিক ট্যারিও মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেটেলারদের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠল: ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে চরম ডানপন্থি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের ওপর সাবেক বাইডেন প্রশাসনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের নতুন ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা: ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সমস্ত অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করা হবে এবং লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে। সেই প্রতিশ্রুতির আলোকেই অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি: মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে তিনি সেখানে সেনা মোতায়েন করতে পারবেন। একই সঙ্গে, মেক্সিকোর মাদক পাচারকারী সংগঠনগুলোকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, আইন মেনে অভিবাসীরা এলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে তা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে।
সীমান্ত বন্ধ করার নির্দেশ: ট্রাম্প সীমান্ত বন্ধ করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। সীমান্তে অবৈধ মাদকদ্রব্য পাচার, মানব পাচার এবং অপরাধ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মেক্সিকোর মাদক চোরাকারবারী চক্রগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠনতকমা দেওয়ার একটি আদেশেও স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। এর মধ্যে সালভাডোরান মাইগ্র্যান্ট গ্যাং এমএস-১৩ এবং ভেনেজুয়েলান গ্যাং ট্রেন ডি আরাগুয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই চক্রগুলোকে আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোর তালিকায় রাখা হবে।
সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ: অবৈধ অভিবাসনকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ ফের শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সীমান্ত প্রাচীর তোলার নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। তবে প্রাচীরের কিছু অংশ তৈরি করা হলেও, সেবার প্রাচীর নির্মাণ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এবার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই অস্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতেই।
মেক্সিকোতে থাকুন কর্মসূচি: ট্রাম্প তার প্রথম দিনেই মেক্সিকোতে থাকুন কর্মসূচি পুনরায় কার্যকর করেছেন। এই কর্মসূচির আওতায় মেক্সিকো ছাড়া অন্য দেশগুলোর অভিবাসী, যারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে চায় তাদের মামলা মার্কিন আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে মেক্সিকোতে থাকতে বাধ্য করা হয়। এর আগে মেক্সিকান নয় এমন প্রায় প্রায় ৭০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে এ কর্মসূচির অধীনে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
অভিবাসন নীতি পরিবর্তন: ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের একটি অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করেছেন। ওই নীতি কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা থেকে ৩০ হাজার অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন এই নীতি সীমান্তে অবৈধ পারাপার বন্ধের লক্ষ্যে চালু করেছিল।
মৃত্যুদণ্ড পুনরায় চালু করা: ট্রাম্প মৃত্যুদণ্ড পুনরায় চালুর একটি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর অপরাধে জড়িত কোনো অবৈধ অভিবাসী এবং আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তা খুনে দোষী সাব্যস্ত যে কারও ওপর এটি প্রযোজ্য হবে।
নির্বাসন: ট্রাম্প ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ পদ্ধতি বন্ধ করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, যা অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শুনানি পর্যন্ত থাকার অনুমতি দিত। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন অভিযান শুরুর কথা ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন। ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ চার্চ ও স্কুলে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে- এমন দীর্ঘদিনের নীতিও বাতিল করবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল: জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিলের নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে এখন থেকে যারা অবৈধভাবে বা শিক্ষা-পর্যটনসহ সাময়িক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্ম দেবেন, তাদের সন্তান আর মার্কিন নাগরিকত্ব পাবেন না। তবে, যদি বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ আমেরিকান নাগরিক হন, তাহলে সন্তান জন্মের পরেই মার্কিন নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।
টিকটককে ৭৫ দিন সময়: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিকটককে আইনি বাধ্যবাধকতা পালনের জন্য ৭৫ দিন সময় দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। নির্বাহী আদেশে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাসা থেকে দাপ্তরিক কাজের সুবিধা বাতিল: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের দপ্তরে উপস্থিত থেকে কাজ করতে হবে; ঘরে বসে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না, এমন একটি নির্বাহী নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে এখন সরকারি কর্মীদের সপ্তাহে পাঁচদিন পূর্ণ সময় দপ্তরে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
ফেডারেল নিয়োগে স্থগিতাদেশ: ট্রাম্প একটি আদেশে সই করে নতুন ফেডারেল নিয়োগ স্থগিত করেছেন। তবে, মার্কিন সামরিক বাহিনীসহ আরো কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য নয়- ততদিন পর্যন্ত যতদিন না ট্রাম্প প্রশাসন সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করায়ত্ব করছে।
সরকারি সেন্সরশিপ বন্ধে পদক্ষেপ: ট্রাম্প একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সরকারি সেন্সরশিপ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক নিপীড়ন বন্ধ: প্রেসিডেন্ট একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার লক্ষ্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফেডারেল সরকারের অস্ত্রায়ন বন্ধ করা। এর আওতায়, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে অস্ত্রায়নের ঘটনা চিহ্নিত করা এবং এই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে বলা হয়েছে।
আমেরিকা সর্বাগ্রে: ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে বিদেশি সহায়তা স্থগিত করেছেন এবং বিভিন্ন বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি পুনপর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এই উদ্যোগকে নতুন আমেরিকা সর্বাগে’ পররাষ্ট্র নীতির অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
টিকা নীতি পরিবর্তন: বাইডেন-যুগের নীতি থেকে সরে এসে ট্রাম্প ফেডারেল কর্মীদের জন্য কোভিড টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাদপ্তর পেন্টাগনের টিকা ম্যান্ডেটের কারণে বরখাস্ত হওয়া আট হাজার সামরিক সদস্যকে পূর্ণ বেতনসহ তাদের কাজে পুনর্বহাল করা হবে।
বৈচিত্র্য ও লিঙ্গ: ট্রাম্প এক আদেশে ঘোষণা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র কেবল দুটো লিঙ্গকেই স্বীকৃতি দেবে। আর তা হচ্ছে নারী ও পুরুষ। একে পরিবর্তন করা যাবে না।
জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা: ট্রাম্প জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং কৌশলগত তেল মজুদ পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি নির্বাহী আদেশে, তিনি আলাস্কার তেলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছেন এবং বলেছেন, ড্রিল, বেবি, ড্রিল নীতির আওতায় আমেরিকার জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানো হবে।
চারজনের চাকরি গেল, হাজারো কর্মকর্তাকে বরখাস্তের হুমকি: যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই ট্রাম্প তার পূর্বসূরির নিয়োগ দেওয়া এই চার কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন।
অভিষেকের পর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া প্রথম পোস্টে নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন। একই পোস্টে তিনি হাজারো কর্মকর্তাকে বরখাস্তের হুমকি দিয়েছেন। বরখাস্ত হওয়া চার ব্যক্তি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের খেলাধুলা, স্বাস্থ্য-সবলতা ও পুষ্টিবিষয়ক পরিষদের হোসে আন্দ্রেজ, জাতীয় অবকাঠামো উপদেষ্টা পরিষদের মার্ক মিলে, উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের ব্রায়ান হুক ও রপ্তানিবিষয়ক পরিষদের কেইশা ল্যান্স বটমস। তাদের তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করা হয়েছে। ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, এই ঘোষণা উল্লিখিত চারজনের বরখাস্তের দাপ্তরিক নোটিশ হিসেবে গণ্য হবে। আরো অনেকের জন্য শিগগির বরখাস্তের নোটিশ আসবে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দিনের সিদ্ধান্তগুলো তার আগের নীতিগুলোর পুনর্বহাল এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তার নেওয়া পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত চার বছর আগে ক্ষমতা না ছাড়তে চাইলেও হোয়াইট হাউস ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ট্রাম্প। চার বছর পর দেশের মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে সেই হোয়াইট হাউসেই ফিরলেন এ ধনকুবের। ২০২০ সালের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর পৌঁছে গিয়েছিলেন খাদের কিনারে; সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে, আততায়ীর বুলেট এড়িয়ে, অধিকাংশ মার্কিন ভোটারের সমর্থন নিয়ে ৫ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার আগে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগে সেখানে উপস্থিত হন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, ছোট ছেলে ব্যারন ট্রাম্প, টিফানি ট্রাম্প, লারা ট্রাম্প, এরিক ট্রাম্প, জ্যারেড কুশনার, ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। ডেমোক্র্যাট হ্যারিসকে হারিয়েই ইতিহাস গড়েন ট্রাম্প।
বিদেশি অতিথি হিসেবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইসহ আরো অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মেটার সিইও মার্ক জুকারবার্গ, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গত নভেম্বরের নির্বাচনে কমালা হ্যারিসকে পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন ট্রাম্প। আমেরিকান গণতন্ত্রের প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসে ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প মাত্র দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি প্রথম মেয়াদের পর পরাজিত হয়ে চার বছর পর আবার জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন। এর আগে ১৮৯০-এর দশকে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড চার বছর পর দ্বিতীয় মেয়াদ লাভ করেন। ৮২ বছর বয়সী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক মেয়াদ পরেই বিদায় নিলেন। তিনি ২০২৪ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এগিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্যগত কারণে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ