গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোরে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সরকার জিম্মি ফেরত পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। রবিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে এই পরিকল্পনা।
এদিকে ইসরায়েলের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন রবিবার দেশটির বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এদের মধ্যে ৬৯ জন নারী, ১৬ জন পুরুষ এবং ১০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ৯৫ জনের নামও প্রকাশ করেছে বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গত বুধবার কাতারের রাজধানী দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি জানান, গাজা উপত্যকায় দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারীর রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) এই চুক্তির অনুমোদন এবং পার্লামেন্টে সেটির ওপর ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস সব শর্তে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আয়োজন করবে না তার মন্ত্রিসভা। ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস শেষ মুহূর্তে চুক্তিতে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করতে চাইছে।
তবে হামাসের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতা ইজ্জত আল রিশক এক বার্তায় বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রস্তাব করেছেন, সেটি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের জন্য হামাস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালান হামাস ও তার মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা। সেই হামলায় নিহত হন এক হাজার ২০০ জন সামরিক ও বেসামারিক ইসরায়েলি। এর পাশাপাশি ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যান যোদ্ধারা।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ওই দিন থেকে গাজায় তাণ্ডব শুরু করেছে ইসরায়েল; যা এখনো চলছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা অগণিত।
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা থেকে বাদ যায়নি গাজার মসজিদ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, এমনকি শরণার্থী শিবিরও।
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরায়েলি নির্বিচার হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজাবাসী চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ