ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে উত্তরা গাজার একমাত্র চালু হাসপাতালটিও বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) কামাল আদওয়ান হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে হাসপাতালটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগ পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। পরে হাসপাতালটির বহু কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায় ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৩৭ জন এবং আহত হয়েছেন আরো ৯৮ জন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ‘সকালে চালানো অভিযানে উত্তর গাজার সর্বশেষ বড় স্বাস্থ্য স্থাপনা কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাথমিক খবরে এ অভিযানে হাসপাতালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে এবং ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।’
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, হাসপাতালটিতে অবস্থান করা ৬০ স্বাস্থ্যকর্মী ও ২৫ জন রোগী জীবনসংশয়ে রয়েছেন। মাঝারি ও গুরুতর অবস্থার রোগীদের পার্শ্ববর্তী একটি অকার্যকর ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তাদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়াসহ হাসপাতালটির কয়েক ডজন কর্মীকে আটক করে একটি তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর আগে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া এলাকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান চালানোর কথা জানায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তাদের দাবি, হাসপাতালটির হামাসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতাল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ‘সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে সংগঠনটি বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গাজায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে দখলদার ইসরায়েলি সরকার। এসব দেশ চলমান এই গণহত্যার অংশীদার।’
এদিকে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব ও জর্ডান। দেশ দুটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ধরনের অভিযান আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
গাজায় আরো ৩৭ প্রাণহানি, মোট নিহত ছাড়াল ৪৫ হাজার ৪৩০
গাজয় প্রায় ১৫ মাস ধরে অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, বৃহস্পতি-শুক্রবারেরর সর্বশেষ অভিযানের পর গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৫ হাজার ৪৩৬ জনে। এ ছাড়া অভিযানে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন এক লাখ আট হাজার ৩৮ জন ফিলিস্তিনি।
নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ ভবনের ধ্বংস্তূপের তলায় অনেকে চাপা পড়েছেন। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবলের অভাবে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, উল্লেখ করা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের বিবৃতিতে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। ইসরায়েলে প্রবেশের পর প্রথমে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে যোদ্ধারা, তারপর ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায়।
হামাসকে ‘যথাযথ শিক্ষা’ প্রদান এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনও চলছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করার আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।
আমারবাঙলা/এমআরইউ