সিরিয়ায় শাসক হিসেবে আসাদ পরিবারের আধিপত্য স্থায়ী হয়েছে টানা পাঁচ দশকেরও বেশি। ১৯৭১ সালে দেশটির সামরিক নেতা হাফেজ আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন এবং এরপর প্রায় তিন দশক দেশ পরিচালনা করেন। ২০০০ সালের জুন মাসে তার মৃত্যুর পর পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
২০০০ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট হন বাশার আল-আসাদ। একই সময়ে তিনি বাথ পার্টির নেতা ও সামরিক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব নেন। তবে তার শাসনের এক দশক পর, ২০১১ সালে সিরিয়ার জনগণ গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে নামলে তিনি কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন।
আন্দোলন বাড়তে থাকলে আসাদ তার বিরোধীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেন এবং দমননীতি জোরদার করেন। এর ফলে দেশটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধে লাখো মানুষ নিহত হন। আসাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।
যুদ্ধ চলাকালীন সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নির্বাচন আয়োজন করেন বাশার আল-আসাদ। তবে এই নির্বাচন অনেকের কাছে অগণতান্ত্রিক বলে বিবেচিত হয়েছে।
যদিও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদ কখনোই বিজয় নিশ্চিত করতে পারেননি, কিন্তু তারপরও তিনি তার সমর্থকদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন।
অবশেষে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) বিদ্রোহীদের সশস্ত্র অভিযানের মুখে দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে যান বাশার আল-আসাদ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তবে দামেস্ক ছাড়লেও তিনি কোথায় গেছেন, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
একজন সিরিয়ান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা তাদের কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসন শেষ হয়েছে।
বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, দামেস্ক এখন 'আসাদ মুক্ত'। তারা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে, যেখানে সেনার কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি। শহরের সেডনায়া এলাকায় একটি বড় কারাগার থেকে বহু বন্দিকে মুক্ত করেছে তারা।
বিদ্রোহীরা আজ সকালে ঘোষণা দিয়েছে, তারা সিরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হোমস শহরও দখল করেছে। শহরটি দখলের পর বিদ্রোহীরা উদযাপন করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বলেছেন, এর মাধ্যমে ১৯৭০-এর দশকে শুরু হওয়া আসাদের পরিবারের ৫৩ বছরের স্বৈরশাসনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমরা খুব সম্ভবত সিরিয়ায় আসাদের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের শেষ ঘণ্টা, এমনকি হয়ত শেষ মিনিটের সাক্ষী হচ্ছি।'
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি একাধিক কারণের ফল। আসাদের মিত্র ইরান ও রাশিয়া বৈশ্বিক ঘটনাবলীর চাপে দুর্বল ও মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং অনেকেই উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 'মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল,' যোগ করেন তিনি।
আমারবাঙলা/এমআরইউ