দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ করে সামরিক আইন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তবে কয়েক ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পার্লামেন্ট সদস্যদের বিরোধিতার মুখে প্রেসিডেন্ট ইওল গভীর রাতে আকস্মিকভাবে জারির কয়েক ঘণ্টা পর সামরিক আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল জাজিরা।
আল জাজিরা বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস হওয়ার পর সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হবে বলে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল জানিয়েছেন। মূলত এ বিষয়ে পার্লামেন্টে ভোটের পর তিনি বলেন, সামরিক আইনের অবসান ঘটাতে পার্লামেন্টের অবস্থান তিনি মেনে নেবেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ আইন প্রত্যাহার করা হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা ইউন সুক ইওলের অপ্রত্যাশিত এই ঘোষণার বিরোধিতা করে ভোট দেওয়ার পরে ইউন পিছু হটলেন। গভীর রাতে আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারির এই পদক্ষেপ সারা বিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও হতবাক করেছিল।
এর আগে জাতীয় পরিষদ সিল করে দেওয়া হয় এবং সৈন্যরা অল্প সময়ের জন্য ভবনে প্রবেশ করে। এ সময় শত শত বিক্ষোভকারী বাইরে জড়ো হয় এবং তারা নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি হয়।
পরে স্থানীয় সময় বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে প্রেসিডেন্ট ইউন এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, কিছুক্ষণ আগে জাতীয় পরিষদ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে এবং আমরা সামরিক আইন পরিচালনার জন্য মোতায়েন করা সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা জাতীয় পরিষদের অনুরোধ মেনে নেব এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকের মাধ্যমে সামরিক আইন তুলে নেব।
বার্তাসংস্থা ইয়োনহাপ জানায়, ইউনের মন্ত্রিসভা আদেশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
এদিকে সামরিক আইন ঘোষণার পর প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে সেটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হলে পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীরা উল্লাস শুরু করেন। তারা ইউনের সামরিক আইনের আদেশ অমান্য করার পাশাপাশি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে রাতভর সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা এসময় ব্যানার ও দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা নেড়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বাইরে ইউন সুল ইওলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দেয়। টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইওল বলেন, পার্লামেন্টের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি সামরিক আইন প্রত্যাহারের কথা সামরিক বাহিনীকে জানিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, পার্লামেন্টের প্রস্তাব গ্রহণ ও সামরিক আইন প্রত্যাহার করার জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠক করছে। বৈঠকের পর সামরিক আইন তুলে নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে উদার দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষা করতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে জরুরি সামরিক আইন ঘোষণা করছি।
তিনি আরো বলেন, জনগণের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা না করে বিরোধী দল কেবল অভিশংসন, বিশেষ তদন্ত এবং তাদের নেতাকে বিচার থেকে বাঁচাতে সরকারকে অচল করে দিয়েছে।
মূলত ইউনের পিপল পাওয়ার পার্টি ও প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে আগামী বছরের বাজেট বিল নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ আকস্মিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তবে সামরিক আইন জারির পর সিউলে পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদ ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে কিছু সময়ের জন্য পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন সেনাসদস্যরা। ভবনের ওপরে হেলিকপ্টার নামতেও দেখা যায়।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও গভীর রাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে সক্ষম হন ১৯০ জন আইনপ্রণেতা। তারা সামরিক আইনের বিরুদ্ধে ভোট দেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য চাইলে সামরিক আইন অবশ্যই তুলে নিতে হবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ