বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ জন আলফ্রেড টিনিসউড মারা গেছেন। যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টের এক সেবাযত্ন কেন্দ্রে (কেয়ার হোম) সোমবার (২৫ নভেম্বর) তার মৃত্যু হয়। সেখানেই তিনি বসবাস করতেন। তার বয়স হয়েছিল ১১২ বছর। জনের পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ বছরের এপ্রিলে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খেতাব পান জন আলফ্রেড। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জন আলফ্রেডকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের স্বীকৃতি দেয়।
এপ্রিলেই ১১৪ বছর বয়সী হুয়ান ভিসেন্ট পি রেজ মোরার মৃত্যু হলে টিনিসউড বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খাতায় নাম লেখান। তার পরিবার জানায়, জীবনের শেষদিন সংগীত আর ভালোবাসায় মুখর ছিল তার চারপাশ।
১৯১২ সালের ২৬ আগস্টে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে অ্যাডা ও জন বার্নার্ড টিনিসউডের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন জন টিনিসউড। একই বছর টাইটানিক জাহাজ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গিয়েছিল। ২০২০ সালে জন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খেতাব পান।
জন আলফ্রেড সারা জীবন ছিলেন লিভারপুল ফুটবল দলের সমর্থক। ১৯০১ ও ১৯০৬ ছাড়া ক্লাবটির জেতা সব কটি ট্রফির ম্যাচ উপভোগ করেছেন তিনি।
এক বিবৃতিতে জনের পরিবার বলেছে, তার অনেক সূক্ষ্ম গুণ ছিল। তিনি ছিলেন একাধারে বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ, সাহসী, যেকোনো সংকটে শান্ত, গণিতে মেধাবী ও একজন সদালাপী। এই গুণগুলো তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়্যাল আর্মি পেস কোরে সামরিক চাকরির সময় সুবিধা দিয়েছে। সেখানে তিনি হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষণ, আটকে পড়া সেনাদের শনাক্ত করা এবং খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করার মতো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
জনের সঙ্গে তার স্ত্রী ব্লডওয়েনের পরিচয় হয় লিভারপুলে একটি নাচের অনুষ্ঠানে। ১৯৪২ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের কন্যা সুজানের জন্ম ১৯৪৩ সালে। এই দম্পতি ৪৪ বছর দাম্পত্য জীবন উপভোগ করেন। জনের স্ত্রী মারা যান ১৯৮৬ সালে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন আলফ্রেড রয়্যাল মেইলে কাজ করেন। পরে তিনি জ্বালানি তেল কোম্পানি শেল ও বিপিতে হিসাবরক্ষকের কাজ করেন এবং ১৯৭২ সালে অবসরে যান। জনের পরিবার বলেছে, অবসর নেওয়ার পরও তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজে ছিলেন সক্রিয়।
জীবদ্দশায় জন একবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে তিনি অনেক বেশি সক্রিয় ছিলেন। তিনি অনেক হাঁটাহাঁটি করতেন। তবে এত লম্বা সময় কীভাবে বেঁচে আছেন, সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই। তিনি অন্যদের থেকে আলাদা নন। জন বলেন, ‘আপনি হয়তো লম্বা সময় অথবা খুব কম সময় বাঁচবেন। আর এ ব্যাপারে আপনার কিছুই করার নেই।’
শততম জন্মদিনের আগে জন আলফ্রেড সাউথপোর্টের হলিস রেস্ট কেয়ার হোমে চলে আসেন। সেখানেই কাটান জীবনের বাকি সময়। ২০১২ সালে ১০০ বছরে পা রাখার পর থেকে প্রতিবছর জন্মদিনে ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠাতেন। বয়সে জনের চেয়ে ১৪ বছরের ছোট ছিলেন রানি এলিজাবেথ। বর্তমান রাজা তৃতীয় চালর্সও কার্ড পাঠানোর এ ধারা জারি রেখেছিলেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন বেঁচে ছিলেন। ২০১৩ সালে তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী ও মানুষ জাপানের ১১৬ বছর বয়সী তোমিকো ইতোকা।
আমারবাঙলা/এমআরইউ