সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক ও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন

রায়হান উল্লাহ

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবারের (৫ নভেম্বর) নির্বাচনে জয়ের ফলে তিনি হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার বয়স এখন ৭৮ বছর। এর আগে জো বাইডেন ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প ৬০ বছর বয়সী ডেমোক্রাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি আরেক নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাত কোটি ১০ লাখের বেশি মার্কিনির ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরলেন ট্রাম্প। নির্বাচনের আগের জনমত জরিপের সব হিসাব-নিকাশ উল্টে দিয়ে মার্কিনিরা আরেকবার বেছে নিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে। ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজের ম্যাজিক ফিগার অতিক্রম করেছেন ট্রাম্প। তার জয়ে কমলা হ্যারিসের যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশায় গুঁড়েবালি হলো।

কমলা হ্যারিস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। কমলার সঙ্গে ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটের ফলে নজর ছিল সবার। তবে নির্বাচনের ফলাফলে অবশ্য তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

নিউ ইয়র্কের এই ধনকুবের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, ‘আমেরিকার জনগণের জন্য এটি চমৎকার জয়। এটি আমাদের আমেরিকাকে আবারো মহান করার সুযোগ দেবে।’ এটি আমেরিকার স্বর্ণযুগ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ সময় মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তার রানিং মেট জে ডি ভান্স।

নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল বুধবার (৬ নভেম্বর) পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি। তবে এরই মধ্যে বিশ্বনেতারা ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছেন।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন অভাবনীয়ই। চার বছর আগের এক পরাজয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন খাদের কিনারে; সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে, আততায়ীর বুলেট এড়িয়ে, অধিকাংশ মার্কিন ভোটারের সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্পের জন্য এ এক অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের গল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮টি ভোটের মধ্যে ২৭০টি পেলেই চলে। সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলে ট্রাম্প জিতে নিয়েছেন ২৭৯টি ইলেকটোরাল ভোট। আর হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩ ভোট। ট্রাম্প শুধু ইলেকটোরাল ভোটই নয় পপুলার ভোটও প্রায় ৫০ লাখ বেশি পেয়েছেন।

লালে লাল রিপাবলিকান শিবির অবশ্য উৎসবে মেতে উঠেছিল আগেই। ২৬৬ ভোট নিশ্চিত হওয়ার পরপরই মঙ্গলবার রাতে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে ওয়াচ পার্টির মঞ্চে হাজির হন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের এই জয়ের মধ্য দিয়ে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল যুক্তরাষ্ট্রে। তার আগে এই রেকর্ড ছিল কেবল গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের। ১৮৮৮ সালে নির্বাচনে হেরে গিয়ে চার বছর পর ফের তিনি জয়ী হয়েছিলেন ১৮৯২ সালে।

ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা ট্রাম্পের কেলেঙ্কারির শেষ নেই। দুনিয়াজুড়ে তাকে নিয়ে সমালোচনা আর শঙ্কারও কমতি নেই। বিশৃঙ্খলা আর ঘরে-বাইরে সমালোচনার মধ্যে চারটি বছর হোয়াইট হাউজে কাটিয়ে ২০২০ সালের নির্বাচনে চরম নাটকীয়তার মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প, যদিও সেই পরাজয় তিনি কখনো মেনে নেননি।

ওই নির্বাচনের পর ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা চিহ্নিত হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কুখ্যাত এক অধ্যায় হিসেবে। মনে হচ্ছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হয়তো সেখানেই শেষ হয়ে গেল।

অবশ্য ভোটের আগেই ট্রাম্প সম্পর্কে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ব্রায়ান লাঞ্জার বলেছিলেন, একবার পরাভূত হওয়ার পর দ্বিগুণ উৎসাহে তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন।

ক্যাপিটল ভবনে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল- তাতে ধরে নেওয়া হয়েছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটেছে। তার অনেক দাতা ও সমর্থক আর কখনো ট্রাম্পকে সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন।

কিন্তু এসব সত্ত্বেও অনুসারীদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সমর্থকরা তার লড়াকু মনোভাব ও মনে যা আসে তা স্পষ্ট করে বলাকে তার সততা ও সাহসের নজির বলে মনে করেন। প্রতিষ্ঠিত রিপাবলিকানরা যাই বলুক দলের কর্মীদের মধ্যে তার প্রভাব ব্যাপকভাবেই বজায় থাকে।

মামলা নিয়ে আদালতে দৌড়ঝাঁপের মধ্যে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনি জনসভায় হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান ট্রাম্প। আততায়ীর গুলি তার ডান কান চিরে বেড়িয়ে যায়।

তার সেই বেঁচে যাওয়ার পেছনে ঐশী উদ্দেশ্য ছিল, আর সেটি হলো আবারো তাকে আমেরিকার নেতৃত্বে আনা- এমন ইঙ্গিত ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতের বিজয়োৎসবেও বলেছেন। তিনি বলেছেন, অনেক মানুষই আমাকে বলেছেন যে- ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়েছেন, সেটি কোনো একটি কারণের জন্যই।

বক্তব্যের এক পর্যায়ের ট্রাম্প ভোটারদের পাশাপাশি স্ত্রী মেলানিয়াকেও ধন্যবাদ দেন। ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়া বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তার সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্রত নিয়ে কাজ করবে।

এবারের নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্প মূল্যস্ফীতি, কর, গর্ভপাত, অভিবাসন, পররাষ্ট্রনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের সমর্থন কুড়িয়েছেন।

ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সবকিছু মানুষের ক্রয় সামর্থ্যের মধ্যে আনার। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠালে আবাসনের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন তিনি। আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপেরও আভাস দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

ট্রাম্পও বিপুল পরিমাণ করছাড় দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছেন। তবে সেটি তার ২০১৭ সালের কর কমানোর নীতিরই আরেক রূপ, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধনীদের জন্যই সহায়ক ছিল।

নর্থ ক্যারোলাইনার সমাবেশে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, মেক্সিকো যদি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসী অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা না করে, তাহলে সব ধরনের মেক্সিকান পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন তিনি। তার এই ঘোষণা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীদের পাশাপাশি অন্য অনেক দেশের মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ রয়েছে।

এবারের নির্বাচনে আলোচনার একটি বড় বিষয় ছিল গর্ভপাতের অধিকার। হ্যারিস সারাদেশের নারীদের জন্য প্রজনন অধিকার সুরক্ষা আইনের পক্ষে তিনি কথা বলেছিলেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, নারীদের যাতে গর্ভপাতের কথা ভাবতে না হয়- সেটি তিনি নিশ্চিত করবেন।

সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের সময়ে নিয়োগ দেওয়া তিন বিচারকের হাতেই যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল হয়েছিল। সে কারণে গর্ভপাত ইস্যুতে নারীদের মন জয় করতে হিমশিম খেতে হয়েছে ট্রাম্পকে। তবে সেটি তার ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হতে পারেনি।

এবারের নির্বাচনি প্রচারের সময় বিভিন্ন জনমত জরিপে আমেরিকানদের প্রায় অর্ধেকই বলেছিলেন, চার বছর আগের তুলনায় এখন তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন। আর মঙ্গলবার ভোটের পর এডিসন রিসার্চের বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে যাদের উদ্বেগ বেশি ছিল, তারাই ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন।

এদিকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই তার শপথ গ্রহণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই জানতে চাইছেন, তিনি কবে শপথ নেবেন। ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে আগামী ২০ জানুয়ারি তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

১৮৪৫ সাল থেকে এই রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। সে সময় থেকেই নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং জানুয়ারির ২০ তারিখে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া, আইনি ব্যবস্থা, এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতির জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও শপথ গ্রহণের মাঝে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখা হয়, যা নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাড়তি পাওয়া, মার্কিন সিনেটও দখলে নিয়েছে রিপাবলিকানরা। বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

আমারবাঙলা/আইইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

স্মরণে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ‘সুজেয় শ্যাম’

মহান মুক্তিযুদ্ধের শব্দ সৈনিক, স্বাধীন বাংলা বেতার...

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর)। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দি...

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মুক্তিজোটের অভিনন্দন

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জা...

‘আমাকে পিটাইতে পিটাইতে শোয়াইয়া ফেলে’

আদালত প্রাঙ্গনেই মারধোর করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর আইনজীবি স্ব...

শোকজের জবাব দিলেন গিয়াস কাদের চৌধুরী, ব্যবসায়ী জানালেন চাঁদা চাননি তিনি

এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি ও তাকে নির্যাতন করার অভিযোগে বিএনপির ভাইস চে...

২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৬৬

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এব...

অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না: তারেক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন,...

স্মরণে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ‘সুজেয় শ্যাম’

মহান মুক্তিযুদ্ধের শব্দ সৈনিক, স্বাধীন বাংলা বেতার...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা