আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে তিনজনের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুললেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। তার দাবি, খালিস্তানি নেতা হারদিপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডায় যা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে হচ্ছে। সেই সব বিষয়ের সঙ্গে ভারতের বিন্দুমাত্র যোগসূত্রও নেই। তাছাড়া তিন ভারতীয় নাগরিকের গ্রেফতারির প্রসঙ্গে কানাডার পক্ষ থেকে ভারতকে কিছু জানানো হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
জয়শংকর আরও বলেন, আমরা বারবার কানাডাতে বলেছি যে আপনাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অটোয়া-নয়া দিল্লির সম্পর্কের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, এমন লোকেদের ভিসা দেবেন না, আইনি স্বীকৃতি বা রাজনৈতিক সুযোগ দেবেন না। কিন্তু উলটো সেই সুযোগ করে দেওয়ায় এসব ব্যক্তি এখন কানাডার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘বিষয়টি আমাদের জন্যও খারাপ হয়েছে। ভারত-কানাডা সম্পর্কেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর শুক্রবার যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের নিয়ে কানাডা এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো তথ্য দেয়নি। তবে তিনি যা শুনেছেন, তাতে ওই সন্দেহভাজন তিনজনের নাকি ভারতীয় গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার ইতিহাস রয়েছে।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কেন নিজ্জারের মৃত্যু নিয়ে ভারতের সমালোচনা করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে জয়শংকর জানান, কানাডার গণতন্ত্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে খালিস্তানপন্থিদের একটি অংশ। লবি তৈরি করেছে। তারা পরিণত হয়েছে ভোটব্যাংকেও। কানাডার সংসদে এখন দেশটির শাসক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। আর কয়েকটি দল তো এই খালিস্তানপন্থিদের উপর নির্ভর করে টিকে আছে। তাই ক্ষমতাসীন দল খালিস্তানিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। তারপর থেকেই ভারত-কানাডার সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে। ট্রুডোর অভিযোগকে অযৌক্তিক ও প্রভাবিত বলে দাবি করে নয়া দিল্লি।
এস জয়শংকর বলেন, কানাডা আমাদেরকে যথেষ্ট্র তথ্যপ্রমাণ দেয়নি। তাদের তদন্তকারী সংস্থাগুলোও আমাদের সহযোগিতা করছে না। তবে এটা পরিষ্কার যে, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই ভারতকে দোষারোপ করছে ট্রুডো সরকার। যেহেতু কানাডায় নির্বাচন আসছে, তাই তারা ভোটব্যাংকের রাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছে।
শুক্রবার (৩ মে) কানাডার ইন্টিগ্রেটেড হোমিসাইড ইনভেস্টিগেশন টিম জানায়, নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে করণ ব্রার (২২), কমলপ্রীত সিং (২২) ও করণপ্রীত সিংকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে। গত বছর সারেতে নিজ্জরকে হত্যার ঘটনায় ওই তিনজন বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সংক্রান্ত কোনও প্রমাণ না দিলেও কানাডার তরফে দাবি করা হয়েছে যে তদন্ত এখনো চলছে।
কানাডার ইন্টিগ্রেটেড হোমিসাইড ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্য ও অফিসার ইনচার্জ মনদীপ মুকার বলেন, এখানেই তদন্ত শেষ হচ্ছে না। আমি জানি যে এই ঘটনায় অন্যান্যরাও যুক্ত আছেন ও হত্যাকাণ্ডে ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
মনদীপ মুকার নিশ্চিত করেছেন যে, এরা সবাই আলবার্তার এডমন্টন শহরের বাসিন্দা। সেখান থেকেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কেউ তিন বছর আবার কেউ পাঁচ বছর ধরে কানাডায় অবস্থান করছেন। ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। সূত্র: পিটিআই, এনডিটিভি
এবি/এইচএন