আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বর্ষণে প্রাচীর ধসে ভারতের চেন্নাইয়ে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। প্রবল বৃষ্টির কারণে ভারতের অন্যতম প্রধান ব্যস্ত চেন্নাই বিমানবন্দরের রানওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ স্থগিত করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে মঙ্গলবার ভারতের দুই রাজ্যে আঘাত হানতে পারে বলে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করে দিয়েছে। ভারতের আবহাওয়া অফিস বলেছে, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম মঙ্গলবার সকালের দিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ওই সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি তা সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতেও প্রবাহিত হতে পারে।
দেশটির তামিলনাড়ু রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক সি. মুথুকুমারান ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, রাজ্যের চেঙ্গালপাত্তু জেলায় প্রবল বর্ষণের কারণে ধসে পড়া একটি প্রাচীরের নিচে চাপা পড়ে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন।
তামিলনাড়ুর রাজধানী, রাজ্যের বৃহত্তম শহর ও প্রধান ইলেক্ট্রনিক পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের কেন্দ্রখ্যাত চেন্নাইয়ের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এ সময় কয়েকটি সড়কে পানির স্রোতে গাড়ি ভেসে যেতে দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে রানওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ভারতের অন্যতম প্রধান ব্যস্ত বিমানবন্দর চেন্নাই বিমানবন্দরের সব ধরনের বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেছেন, চেন্নাইয়ের কয়েকটি এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে এবং সোমবার সকাল থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এবারের এই ঘূর্ণিঝড় তামিলনাড়ুতে আঘাত হানা ২০১৫ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহ বন্যার পরিস্থিতির স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনছে। ওই বছর তামিলনাড়ুতে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ২৯০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাসে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ওই দুই রাজ্যের কর্তৃপক্ষ উচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যে উপকূলীয় এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উভয় রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, মিগজাউমের কারণে সমুদ্র উত্তাল থাকায় জেলেদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাছ শিকারে যেতে বারণ করা হয়েছে।
তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের এক নোটিশে বলা হয়েছে, আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে চেন্নাইসহ তামিলনাড়ুর চারটি জেলায় সোমবার ও মঙ্গলবার স্কুল, কলেজ, অফিস ও ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, অন্ধ্র প্রদেশের কিছু অংশে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্ধ প্রদেশের আটটি উপকূলীয় জেলা থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ৭ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোট ২৮ হাজার মানুষকে উপকূল থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পথ ও তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সূত্র: রয়টার্স।
এবি/এইচএন