সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

হিটলারের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, নতুন তথ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এডলফ হিটলার সারাবিশ্বে পরিচিত নাম। তিনি ছিলেন স্বৈরশাসক হিসেবে কুখ্যাত। তিনি একজন অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ, যিনি ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশের ফিউরার ছিলেন।

কথিত আছে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সময়ে হিটলার অন্তত এক কোটি ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছেন। যাদের মধ্যে হিটলারের নাৎসি জার্মান বাহিনী ও দালালদের হাতে নিহত হয় ৬০ লাখ ইহুদি বাকি ৫০ লাখ অ-ইহুদিকে হত্যা করা হয় গণহত্যার সময়ে। এ হত্যাকাণ্ড চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত।

তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। ধরা পড়ার ভয়ে তিনি দুটি প্রাণঘাতি উপায় বেছে নিয়েছিলেন।

৩০ এপ্রিল, ১৯৪৫। সোভিয়েত রেড আর্মির সৈন্যরা জার্মানির বার্লিন ঘিরে ফেলেছে। ক্রমেই এগিয়ে আসছে হিটলারের বাংকারের দিকে। সেই সময় অ্যাডলফ হিটলার তার শেষ আশ্রয়স্থল, নতুন তৈরি চ্যান্সেলর ভবনের পাশের বাংকারে আত্মহত্যা করেন। ওই দিনের ঘটনাগুলো ঐতিহাসিকভাবে নথিভুক্ত থাকলেও বছরের পর বছর ধরে তার মৃত্যুকে ঘিরে রয়েছে অনেক মিথ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, হিটলার যুদ্ধের পরে বেঁচে ছিলেন এবং দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ অ্যান্টার্কটিকায় তার গোপন ঘাঁটির কথা বলেছিলেন।

হিটলারের মৃত্যুর ৮০ বছর পর হিটলারের মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন হামবুর্গ এপেনডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ক্লাউস পুশেল। তিনি গত ২০ মার্চ তার সদ্য প্রকাশিত নতুন বই ‘দ্য টোড গেট উবের লাইশেন’ বা ‘মৃত্যুর পথে লাশ পড়ে থাকে’তে লিখেছেন হিটলারের মৃত্যুর না জানা অনেক কথা।

পুশেল লিখেছেন, ‘সায়ানাইড ক্যাপসুল মুখে দিয়ে কামড়ে ভেঙে খাওয়া এবং এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথায় গুলি করে যৌথ প্রক্রিয়ায় আত্মহত্যাই ছিল আ্যাডলফ হিটলারের মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ। হিটলার ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে তার বাংকারে আত্মহত্যা করেন। তার কিছু পরেই সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনে হিটলারের বাংকারে এসে উপস্থিত হয়।

হামবুর্গ ইনস্টিটিউট অব ফরেনসিক মেডিসিনের সাবেক প্রধান ক্লাউস পুশেল ১৯৯০ সালে মস্কোর সামরিক মহাফেজখানায় রক্ষিত মাথার খুলি ও অ্যাডলফ হিটলারের দেহের রাশিয়ান ময়নাতদন্তের ফলাফল পরিদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তার সদ্য প্রকাশিত বইটিতে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে এডলফ হিটলারের মৃত্যরহস্য বিশ্লেষণ করেছেন। এডলফ হিটলারের মৃত্যুর ৮০ বছর পর হামবুর্গের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হিটলারের মৃত্যু নিয়ে নানা মিথ ভেঙে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, যুদ্ধের শেষে হিটলারের মৃত্যুকে ঘিরে কয়েক দশক ধরে অনেক মিথ ছড়িয়েছিল, যেগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ড. পুশেলের মতে, হিটলারের দাঁতের পরীক্ষার ফলাফল স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যায় যে মৃতদেহটি অ্যাডলফ হিটলারের।

পুশেলে বলেন, ‘আমার ধারণা হলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত বার্লিনে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি হলেও হিটলারের বাংকার থেকে প্রাপ্ত মৃতদেহগুলোর পরীক্ষা বেশ যত্নসহকারে এবং বোধগম্যভাবে সম্পন্ন করে নথিভুক্ত করা হয়েছিল।’

তবে পুশেলের কৌতূহলোদ্দীপক নিরীক্ষায় যে বিষয়গুলো নতুন করে এসেছে এর একটি হলো, হিটলারের একটি অণ্ডকোষ ছিল না। এই আবিষ্কারের দুটি ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। আর তা হলো, ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার আঘাতের কারণে অণ্ডকোষ বা ক্রিটোকিডিজম হারান। পরে ল্যান্ডসবার্গ কারাগারে তিনি যখন আটক ছিলেন, তখন কারাগারের একজন মেডিক্যাল অফিসার হিটলারের বাঁ অণ্ডকোষ না থাকার বিষয়টি নির্ণয় করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯২৩ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর হিটলারকে ল্যান্ডসবার্গ কারাগারে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। সে সময় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর চিকিৎসকেরা হিটলারের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর বর্ণনা দেননি। শুধু শরীরের উপরিভাগের বিস্তারিত বিবরণ দেন। হিটলারের খুলি এবং শরীরে একধরনের গন্ধের কারণ সম্পর্কে ক্লাউস পুশেল বলেছেন, এটি ছিল পটাশিয়াম সায়ানাইডের মাধ্যমে বিষক্রিয়ার ইঙ্গিত।

এ ছাড়া হিটলারের মুখগহ্বরে কাচের টুকরা পাওয়া যায়। তা এটিই স্পষ্ট করে যে তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইডের অ্যাম্পুল কামড়ে ছিলেন। এই পটাশিয়াম সায়ানাইডই কি প্রাণঘাতী ছিল নাকি হিটলার খুব দ্রুত নিজের মাথায় গুলি করে মারা গিয়েছিলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। মাথার খুলির আঘাতের ওপর ভিত্তি করে ড. পুশেল অনুমান করেন যে হিটলার মাথার ডান দিকে সাত দশমিক ৬৫ মিলিমিটার ক্যালিবারের ভালথার পিস্তল দিয়ে নিজেকে গুলি করেছিলেন। সায়ানাইড ক্যাপসুল মুখে কামড় দিয়ে চিবিয়ে খোলার পর পর্যন্ত তার হাতে দুই মিনিট পর্যন্ত সময় ছিল। সেই সময় তিনি তার মাথায় গুলি করেন।

পুশেলের মতে, আত্মহননকে বা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হিটলার একই সঙ্গে দুটি প্রাণঘাতী পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

হিটলার তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তার মৃতদেহটি যেন রাইখ চ্যান্সেলারির বাগানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু এই দাহপ্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সোভিয়েত রেড আর্মি এসে হাজির হয়।

সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কয়েক দশক ধরে হিটলারের দেহাবশেষ সংরক্ষণ করেছিল। বেশ কয়েকবার কবর দেওয়া হয়েছিল এবং কবর থেকে তোলা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৫ এপ্রিল কেজিবি প্রধান ইউরি আন্দ্রোপভ এবং সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা লিওনিড ব্রেজনেভ সাবেক পূর্ব জার্মানির ম্যাগডেবার্গ শহরের সোভিয়েত সিক্রেট সার্ভিস সদর দপ্তরের একটি বাগানে মৃতদেহটি মাটিচাপা দিয়ে রাখার নির্দেশ দেন।

১৯৯১ সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে ম্যাগডেবার্গ শহরের সোভিয়েত সিক্রেট সার্ভিস সদর দপ্তরটি বন্ধ করে দেওয়ার আগে মাটি চাপা দিয়ে রাখা দেহাবশেষ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তবে শুধু হিটলারের খুলিটি মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া দেহাবশেষের ছাইগুলো শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এলবে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই অবশেষে ধ্বংস হয়ে যায় এডলফ হিটলারের মৃতদেহ।

ক্লাউস পুশেল ও সাংবাদিক বেটিনা মিটেলাখার যৌথভাবে বইটি প্রকাশ করেছেন।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রাজনৈতিক দলের সমর্থন না পেলে সব কাজ বিফলে যাবে: সিইসি

প্রবাসী ভোটিং পদ্ধতি বাছাইয়ে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনদের সমর্থন আশা করেন প্রধা...

কাশ্মীর সীমান্তে টানা পঞ্চমবারের মতো গোলাগুলি

কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব কন্ট্রো...

কানাডায় জয়ের পথে মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টি

কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্...

মহাবিশ্বের কাঠামো কত বড়?

হারকিউলিস-করোনা বোরেলিস গ্রেট ওয়াল মূলত বিভিন্ন গ...

সাবেক সংসদ সদস্য তুহিনের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রকৌ...

জবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, বন্ধু আটক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সংগীত বিভাগের এক ছাত...

পদ্মা নদীতে টর্নেডো, পানির ‘স্তম্ভ’ উঠল আকাশে!

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে টর্নেডোর উৎপত্তি হয়...

রেফারিকে বরফ ছুড়ে ছয় ম্যাচ নিষিদ্ধ রুডিগার

কোপা দেল রের ফাইনালে রেফারির দিকে তেড়ে যাওয়া ও কিছ...

‘অচেনা মানুষ রাতে রুমে ঢুকার চেষ্টা করে’ 

বলিউড অভিনেত্রী মৌনী রায়ের ঘরে মধ্যরাতে ঢুকার চেষ্...

রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর রায় ৮ মে

দুই যুগ আগে রাজধানীর রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনু...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা