ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনার পর প্রতিবেশি ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ উত্তেজনা সময় পেরিয়ে নানা মাত্রা পাচ্ছে। দেশ দুটির সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মাঝে আবারো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এনিয়ে টানা চাররাত ধরে কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলো। সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যমে গোলাগুলির বিষয়ে বরাবরের মতো পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা দেশটির সংবাদমাধ্যমে এখনো এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এনডিটিভি বলছে, জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর টানা চতুর্থ রাতেও সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে বিনা উসকানিতে পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, কুপওয়ারা ও পুঞ্চ জেলার বিপরীত পাশে পাকিস্তানের সেনাঘাঁটি থেকে বিনা উসকানিতে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। ভারতীয় সেনারা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে তার জবাব দিয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো পুঞ্চ সেক্টরেও পাকিস্তানের সেনারা সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করল বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
এর আগে শনিবার রাতেও কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এদিনের গোলাগুলির বিষয়ে চীনের সংবাদসংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, কোনো ধরনের প্ররোচনা ছাড়াই নিয়ন্ত্রণরেখায় গুলি চালাতে শুরু করে ভারতীয় সেনারা, পরে পাকিস্তানও পাল্টা গুলি চালিয়ে জবাব দিয়েছে।
গত শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।
এদিকে পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তা ছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে শুরু করেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তে ভারতকে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। শনিবার পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে এক প্যারেড অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
অন্যদিকে দেশ দুটির নেতৃস্থানীয় অংশ থেকে কথার বান ছুটছেই। ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ বলেছেন, সিন্ধু নদী দিয়ে যেন এক ফোঁটা পানিও পাকিস্তানে না যায় সেই ব্যবস্থা করা হবে। অন্যদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, সিন্ধু দিয়ে হয় হয় আমাদের পানি, নয় তাদের রক্ত বইবে। দেশ দুটির বৈরি ভাব কমাতে মধ্যস্ততার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান ও সৌদি আরব।
আমারবাঙলা/এমআরইউ