ইঁদুরের নাম রনিন। দেখতে অন্য ইঁদুরের থেকে একটু আলাদা। আকারে অন্যদের তুলনায় খানিকটা বড়। ইঁদুরটির বয়স পাঁচ বছর।
এই বয়সে কম্বোডিয়ায় শতাধিক ল্যান্ডমাইন এবং অন্যান্য অবিস্ফোরিত অস্ত্র শনাক্ত করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে রনিন নামের ইঁদুরটি।
রনিনের গন্ধের তীব্র অনুভূতি আছে। রনিন লুকানো ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরক শুঁকে বের করে। তাকে একটি গ্রিড প্যাটার্নের মধ্যে পদ্ধতিগতভাবে কাজ করার এবং মাটিতে আঁচড় দিয়ে ল্যান্ডমাইন চিহ্নিত করার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আফ্রিকান দৈত্যাকার থলিযুক্ত ইঁদুরটি মোট ১০৯টি ল্যান্ডমাইন এবং ১৫টি অবিস্ফোরিত অস্ত্র শনাক্ত করেছে। গত শুক্রবার বেলজিয়ামের অলাভজনক সংস্থা এপিওপিও এ কথা জানিয়েছে।
তানজানিয়ায় জন্মগ্রহণকারী পাঁচ বছর বয়সী রনিন গড় পোষা ইঁদুরের চেয়ে অনেক বড়। এপিওপিও অনুসারে, ইঁদুরটি দুই ফুটেরও বেশি লম্বা (প্রায় একটি বিড়ালের দৈর্ঘ্য) এবং ওজন দুই দশমিক ছয় পাউন্ড।
এপিওপিও জানায়, রনিন ও তার মতো ইঁদুররা প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিনিট কাজ করে। যখন তারা একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছায়, তখন তাদের অবসরপ্রাপ্তদের দলে স্থানান্তরিত করা হয় এবং এপিওপিওর তত্ত্বাবধানে থাকে। আগের রেকর্ডধারী মাগাওয়া ২০২১ সালে অবসর গ্রহণ করে। সে ২০২২ সালে মারা যায়।
রনিনকে এপিওপিওর সবচেয়ে সফল মাইন শনাক্তকারী ইঁদুর হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসও তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বরেকর্ড গড়া ইঁদুরটি আরো দুই বছর বা এর চেয়ে বেশি সময় শনাক্তকরণের কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করছে এপিওপিও।
অলাভজনক সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রনিনের তত্ত্বাবধায়ক ফ্যানি বলেন, রনিনের অর্জনগুলো ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধির প্রশিক্ষণের অবিশ্বাস্য সম্ভাবনার প্রমাণ। ইঁদুরটি কেবল একটি সম্পদ নয়, সে মূল্যবান অংশীদার ও সহকর্মী।
আগের রেকর্ডটি ছিল আফ্রিকান দৈত্যাকার থলিযুক্ত ইঁদুর মাগাওয়ার দখলে। সে পাঁচ বছর ধরে ৭১টি ল্যান্ডমাইন এবং ৩৮টি অবিস্ফোরিত অস্ত্র শনাক্ত করেছিল। ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাইন শনাক্তকারী ইঁদুরদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এপিওপিও। রনিন ক্লিকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে, যেখানে ইঁদুরটি ক্লিকের শব্দকে একটি আচরণের সঙ্গে যুক্ত করতে শেখে, যাতে সে বিস্ফোরকের গন্ধ শুঁকতে শিখতে পারে।
অবিস্ফোরিত ল্যান্ডমাইন ও অস্ত্র কম্বোডিয়ার একটি বড় সমস্যা। ল্যান্ডমাইন মনিটরের ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, দশকের পর দশক ধরে সংঘাতের ফলে দেশটির মাটিতে প্রায় ৬০ লাখ অবিস্ফোরিত অস্ত্র রয়ে গেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে পুঁতে রাখা বোমাগুলোর কারণে প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৪৫ হাজার মানুষ।
এগুলো শনাক্ত করাও কঠিন এবং বিপজ্জনক। ইঁদুরের উৎপত্তি এখানেই; তাদের উচ্চ বুদ্ধিমত্তা, গতি এবং তীব্র ঘ্রাণশক্তি তাদের বিস্ফোরক শনাক্ত করতে পারদর্শী করে তোলে।
ল্যান্ডমাইন শনাক্তকরণ অলাভজনক সংস্থা এপিওপিও জানিয়েছে, বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে এখনো আনুমানিক ১১ কোটি ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা আছে। ২০২৪ ল্যান্ডমাইন মনিটর অনুসারে, ২০২৩ সালে ল্যান্ডমাইনের কারণে বিশ্বব্যাপী পাঁচ হাজার ৭৫৭ জন হতাহত হয়েছে। যার মধ্যে ৩৭ শতাংশ শিশু ছিল।
সূত্র : সিএনএন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ