মাম্পস ভাইরাসজনিত একাট ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ হলে সাধারণত গলো ফুলে যায়। রোগটিতে যেকোনো বয়সের কেউই আক্রান্ত হতে পারে। তবে ২ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার বেশি। সময়মতো রোগটির প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মাম্পস থেকে মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস, অণ্ডকোশ ও ডিম্বাশয়ে প্রদাহ, গর্ভপাত, শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ আরও অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে বা প্রতিরোধের টিকা না নিলে পুনরায় এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা খুব কম থাকে।
মাম্পস কী?
আমাদের দেহের দুই কানের কানের নিচের দিকে চোয়ালের পেছনে প্যারোটিড গ্রন্থি নামের দুটি লালাগ্রন্থি আছে। বিভিন্ন কারণে এগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রদাহ হয় ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে। লালাগ্রন্থিটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত হলে তাকে প্যারোটাইটিস বলে। আর যখন এটি প্যারামিক্সো ভাইরাস গ্রুপের মাম্পস ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়, তখন একে বলে মাম্পস। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র বা আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাসটি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়।
মাম্পস ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পেতে দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হয় ঠিকই কিন্তু লক্ষণগুলো এত মৃদু হয়ে থাকে যে রোগী বুঝতেই পারেন না তিনি মাম্পসে আক্রান্ত। তবে এ রোগের প্রধান উপসর্গ হলো প্যারোটিড গ্ল্যান্ড বা কানের নিচে ফুলে গিয়ে ব্যথা হওয়া। ফোলা প্রথমে চোয়ালের এক পাশে শুরু হলেও ধীরে ধীরে অন্য পাশও ফুলে ওঠে। এ ফোলা সাধারণত ৭-১০ দিনের মতো স্থায়ী হয়। এছাড়া মাম্পসের অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে— জ্বর, কান ও গলাব্যথা, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, বমি, ক্লান্তি ও প্রচণ্ড দুর্বল অনুভব করা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া।
মাম্পসের চিকিৎসা
মাম্পস সাধারণত আপনা আপনিই সেরে যায়। বেশির ভাগ রোগী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে জ্বর ও ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সেবন করা যেতে পারে। তাছাড়া আক্রান্ত অবস্থায় যদি রোগীর প্রচণ্ড জ্বর, ঘন ঘন বমি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া ও তলপেটে ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে অথবা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এছাড়া মাম্পস হলে— রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে, রোগীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র অন্য কেউ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে, হাঁচি-কাশির সময় রোগীকে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে, যাতে অন্য কারো মধ্যে এ রোগ সংক্রমিত না হয়, হালকা গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে, নরম ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে, হালকা গরম লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করানো যেতে পারে।
মাম্পস প্রতিরোধে করণীয়
যেকোনো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো টিকা গ্রহণ। মাম্পস প্রতিরোধেও সঠিক সময়ে টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে জন্মের ১২-১৫ মাস বয়সের মধ্যে প্রথম ডোজ ও চার-ছয় বছর বয়সের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ এমএমআর টিকা দেয়া হয়। একই সঙ্গে হাম, মাম্পস ও রুবেলা প্রতিরোধে এ টিকার কার্যকারিতা শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ।