গণমাধ্যমকে বলা হয় জাতির বিবেক। অন্যায়-অবিচার, শাসন-অপশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের হয়ে মুখ খোলা গণমাধ্যমেরই কাজ। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে এই মহৎ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কটাক্ষ করে সাংবাদিকের বদলে বলা হয় ‘সাংঘাতিক’।
পাড়ার চায়ের দোকানদার থেকে শুরু-এমনকি বাদ যায় না রিকশাওয়ালারাও। সাংবাদিকরা যেন ঘৃণার পাত্র। গণ অভ্যুত্থানের পর কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের তো সরাসরি বলা হয়েছে দালাল।
কেন এত ক্ষোভ সাধারণ মানুষের? ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। বিগত সরকারের আমলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলেও চাটুকারী সাংবাদিকতার প্রভাব চোখে লাগার মতন।
দেশের দুই স্বনামধন্য গণমাধ্যম ‘ডেইলিস্টার’ ও প্রথম আলো’র বিরুদ্ধেও সাধারণ মানুষের এমন হাজারও অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষ ক্ষেপে যাওয়ার প্রধান কারণ কী তা আলোচনা সাপেক্ষ। তবে বিগত সরকার যেভাবে ভারতপ্রীতি প্রদর্শন করেছিল তাতে সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট কিছু মহলে এই প্রশ্ন থেকেই যায়, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় কোথায়?
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শক্তি পেয়েছে সাধারণ মানুষ। এবার আর কারও দাসত্ব মানা হবে না বলেই কি তারা রব তুলতে পারছেন দেশের কিছু নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা পোড়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এর আগে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আমজনতার ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে বিক্ষোভে মিছিল করেছেন এই শিক্ষার্থীরা।
মিছিলে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, 'দিল্লির আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘প্রথম আলো-ডেইলি স্টার, তৈরি করে স্বৈরাচার’; ‘কারওয়ান বাজারে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করার কারণে মানুষ হাসিনার বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তুলে তার পতন ঘটিয়েছে। সেটা অভ্যুত্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও সেই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব লীন করে দিল্লির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ হামলা চালালো কার আদেশে জাতি জানতে চায়।
সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আরও বলেন, আগস্ট পরবর্তী অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, এমনকি সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করে রেখেছে। কিন্তু সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি। অথচ প্রথম আলোর বিরুদ্ধে কথা বললে পুলিশ আক্রমণ করে। তাহলে কি সরকারের চেয়েও বড় সরকার হয়ে গেছে প্রথম আলো? তারা এই কমান্ড কার কাছ থেকে পেয়েছে জনগণ জানতে চায়।
এদিকে দেশের গণমাধ্যম সংস্কারের দিকে পদক্ষেপ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় গত বৃহস্পতিবার। কমিশন সভায় গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমের অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা নিয়ে আঞ্চলিক ভিত্তিতে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হবে, যেখানে স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদপত্রের প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে। জনগণের আস্থা অর্জনে গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামত গ্রহণের বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
কমিশনের সভায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে সামগ্রিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে একটি জনমত জরিপের বিষয় আলোচিত হয়। বিগত আন্দোলনে সংবাদমাধ্যমের ব্যর্থতা ও বিতর্কিত ভূমিকার কারণে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তার পটভূমিতে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট সবার আত্ম-অনুসন্ধানের ওপর সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়।
সংস্কার হওয়া প্রয়োজন দেশের সব দিকেই। সংবাদমাধ্যম কেবল একটি দিক। বিগত ১৬ বছরের পৈচাশিক সরকারব্যবস্থা দেশে যে পরিমাণ ভূত উৎপাদন করে রেখে গিয়েছে তা কেবল দু-একদিনে সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়।
.
আমার বাঙলা/এসএইচ