একটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেনাবাহিনী। দেশের সীমান্ত রক্ষা, বিদেশি আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা সেনাবাহিনীর কাজ। আবার দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও কাজ করে যায় সেনাবাহিনী। এ ছাড়া জাতয়ি দুর্যেোগে ঝাপিয়ে পড়েন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
মজার বিষয়, বিশ্বে এমন কিছু দেশ রয়েছে, যাদের কোনো সেনাবাহিনী নেই। তাহলে সেইসব দেশ সীমান্ত রক্ষা, অন্য দেশের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় কীভাবে সেই প্রশ্ন আসতে পারে। আরো প্রশ্ন আসতে পারে দেশগুলো ঠিকঠাক ভাবে চলছে কীভাবে?
সামোয়া: ওশেনিয়া মহাদেশের ক্ষুদ্র দেশ সামোয়া। জনসংখ্যা দুই লাখের কিছু বেশি। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে নেই কোনো সামরিক বাহিনী। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সীমিত সংখ্যক পুলিশ এবং নৌবাহিনী রয়েছে। যারা হালকা অস্ত্র বহন করে। তবে, ওশেনিয়া কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়লে এগিয়ে আসবে নিউজিল্যান্ড, এই মর্মে দেশ দুটির মধ্যে রয়েছে একটি চুক্তি।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ: এটিও ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী— এখানে মাত্র ৪২ হাজার মানুষ বসবাস করেন। ছোট-বড় মিলিয়ে দেশটিতে এক হাজার ২০০-এর বেশি দ্বীপ রয়েছে। আয়তন মাত্র ১৮১ বর্গকিলোমিটার। দেশটিতে নেই কোনো সামরিক বাহিনী। তবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য স্বল্পসংখ্যক পুলিশ এবং সাগরে টহলের জন্য রয়েছে মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স ইউনিট। অবশ্য সামরিক বাহিনী না থাকা নিয়ে ছোট্ট এই দেশের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ আমেরিকা তাদের নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ডোমিনিকা: ৭৫৪ বর্গকিলোমিটারের দেশ ডোমিনিকা। জনসংখ্যা ৭৩ হাজারের কিছু বেশি। ১৯৮১ সাল থেকে কোনো সেনাবাহিনী নেই দেশটিতে। তবে রয়েছে পুলিশ ফোর্স ও কোস্টগার্ড। যুদ্ধ বা অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী সামরিক বাহিনী হিসেবে কাজ করে।
নউরু: মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে অবস্থিত নউরু। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য বলছে, এর জনসংখ্যা ১২ হাজারের কিছু বেশি। ২১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটি জাপান থেকে স্বাধীনতা পায় ১৯৬৮ সালে। তারপর থেকেই তাদের কোনো সেনা বা সামরিক বাহিনী নেই। তবে অস্ত্রধারী পুলিশ বাহিনী আছে তাদের। অবশ্য যে দেশে সড়ক আছে মোটে ১৮ কিলোমিটার, সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ খুব কঠিন কিছু নয়। তারপরও কোনো বিপদে পড়লে চুক্তি অনুসারে অস্ট্রেলিয়া নউরুকে নিরাপত্তা দেয়।
লিচেনস্টাইন: জাতিসংঘের হিসাবে লিচেনস্টাইনের জনসংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি। ছোট্ট এই দেশের মোট আয়তন ১৬০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ দখল করে আছে ছোট-বড় পাহাড়। এমনিতে ছোট্ট দেশ, তারপর পার্বত্য এলাকা, পূবে রাইন নদী, পশ্চিমে অস্ট্রিয়ার পর্বতমালা- সব মিলিয়ে লিচেনস্টাইনের ভাগ্যে কোনো বিমানবন্দর জোটেনি। তেমনি দেশটিতে নেই কোনো সেনাবাহিনী। ১৮৬৮ সালে খরচ কমাতে সেনাবাহিনী বাদ দেয় দেশটি। তবে যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী গঠনের অনুমতি থাকলেও যুদ্ধ না হওয়ায় এটির প্রয়োজন পড়েনি।
উপরের তালিকায় নাম নেই কিন্তু সামরিক বাহিনী নেই এমন দেশের তালিকায় আরো অনেক দেশ আছে। গ্রানাডা, কিরিবাতি, পালাউ ও সলোমান দ্বীপপুঞ্জেও সেনাবাহিনী নেই। এদিকে ভ্যাটিকান সিটিতেও সেই অর্থে সামরিক বাহিনী নেই। তবে এখানে পোপের নিরাপত্তায় সুইস গার্ড নামের একটি সশস্ত্র বাহিনী আছে। যদিও তাদের নিয়ন্ত্রণভার ভ্যাটিকান রাজ্যের নয়। এ ছাড়া আরো কয়েকটি দেশ আছে, যাদের স্থায়ী বা পেশাদার সেনাবাহিনী নেই। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে- কোস্টারিকা, মোনাকো, আইসল্যান্ড, মরিশাস, পানামা ও ভানুয়াতু।
আমারবাঙলা/এমআরইউ