বাঙালি খাদ্যসংস্কৃতির অন্যতম মুখরোচক একটি পদ হলো ভর্তা। কিছু ঢাকাই রেস্তোরাঁ শুধু ভর্তায় ভর করেই সুনাম কুড়াচ্ছে। ভর্তা তৈরিতে সবজি, শাক, বীজ, খোসা, কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সেই তালিকায় যোগ হয়েছে কিছু ভেষজ পাতাও। ভর্তা যেমন স্বাদে বৈচিত্র আনে তেমনি পুষ্টিগুণেও উঁচু।
থানকুনি পাতার কথাই ধরা যাক। এটি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হয়েছে। সপ্তাহে কয়েকবার এই পাতার ভর্তা খেলে পুষ্টির ঘাটতি থাকে না। চুলপড়া কমার পাশাপাশি বলিরেখা দূর করে। বাড়ে চামড়ার ঔজ্জ্বল্য। পেটের সমস্যা সারাতেও থানকুনি পাতার ভর্তার সমাদর রয়েছে। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে, শিউলি পাতার রসের সঙ্গে এই ভেষজ মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুগন্ধি ধনেপাতার ভর্তা স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে রান্নায় ও স্যালাদে এ পাতার চাহিদা তুঙ্গে। ধনেপাতায় ১১ ধরনের প্রয়োজনীয় তেল থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। ডায়বেটিস রোগীদের জন্য এই পাতা ওষুধের।
এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তে সুগার কমায়। ধনেপাতা ভালো মানের অ্যান্টিসেপটিক। এটি মুখের আলসার নিরাময় করে। এমনকি পাকস্থলী ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে ধনে পাতার ভর্তা। ধনে পাতার ভর্তায় থাকা ভিটামিন কে অ্যালঝাইমার্স প্রতিরোধে করে। এর প্রয়োজনীয় তৈলাক্ত উপাদান ত্বকের জ্বালাপোড়া ও ফুলে যাওয়া রোধ করে। ধনেপাতায় রয়েছে বিষক্রিয়ারোধী উপাদান, যা একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন সারায়।
এর অ্যান্টিহিস্টামিন অ্যালার্জি থেকে সুরক্ষিত রাখে। গুটি বসন্ত থেকে রেহাই পেতেও খাওয়া যেতে পারে ধনেপাতার ভর্তা। ঔষধী গুণে ভরপুর আরেকটি ভেষজপাতা পুদিনা। রান্নার পাশপাশি এর ভর্তাও হয়। বিজ্ঞানীদের দাবি, পুদিনা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। কাজটি করে এই পাতায় থাকা পেরিলেল অ্যালকোহল, যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান। পুদিনা পাতার ভর্তা খেলে শরীরে ক্যানসার কোষ বাড়তে পারে না। ভেষজ গুণ রয়েছে সজনে পাতাতেও। এর ভর্তা হাঁচি-কাশির পথ্য। কচি পাতার ভর্তা নিয়মিত খেলে ধীরে ধীরে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।
চিকিৎসকদের মতে, সাজনের পাকা পাতা খেলে ব্লাডপ্রেসার এক সপ্তাহের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসবে। এসব ছাড়াও বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে তুলসী ও আমপাতা ভর্তা করে খাওয়া হয়। এ ছাড়া লাউ, চিচিঙ্গা ও ডাটাপাতা ভর্তা করে খাওয়ারও চল রয়েছে।