বাঙলা ডেক্স: নানান কলকাকলিতে পৃথিবীতে ভোরের বার্তা ছড়িয়ে দেয় পাখিরা। মিষ্টি সুর, আপনার ভোরকে করে তোলে আরও সুন্দর ও উপভোগ্য। এ ডাক শুধু ভোরের আহ্বান নয়, প্রেমিকাকে ডাক পাঠানোর বার্তা। সঙ্গীর কাছে করা পাশে থাকার অঙ্গীকারও বটে।
তবে, আজকাল মানুষের মতো পাখিদের সংসারেও ভাঙ্গন ধরছে, পাখিরাও পরকীয়া করছে। ফটাফট প্রেম হচ্ছে আবার ঝটপট বিচ্ছেদও হয়ে যাচ্ছে। শুনতে আশ্চর্য মনে হচ্ছে সবারই, কিন্তু তা ই ঘটছে ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাখিদের বিচ্ছেদের শুনে ব্যাপারটা হাস্যকৌতুক হিসেবে মনে হলেও মোটেও তা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। ডিজিটাল সভ্যতার বাড়াবাড়ির কারণে পাখিদের পারস্পরিক কথোপকথন ও তাদের বংশবিস্তারের প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল ‘দ্য প্রসিডিংস’ দাবি করেছে, চীন ও জার্মানির বিজ্ঞানীরা পাখিদের সংসারে নাক গলিয়ে দেখেছেন, পাখিদের দাম্পত্যে ঝগড়া বাড়ছে। সংসার নাকি টিকছেই না। এখনও পর্যন্ত ২৩২টি পাখি-দম্পতির বিচ্ছেদ দেখেছেন তারা।
সাধারণত, পুরুষ ও স্ত্রী পাখি গাঁটছড়া বাঁধার পরে প্রথম সন্তান আসা পর্যন্ত একসঙ্গেই থাকে। এটাই পাখিদের নিয়ম। কিন্তু বিজ্ঞানীদের দাবি, ইদানীং দেখা যাচ্ছে প্রথম ব্রিড হওয়ার আগেই পুরুষ পাখি বা স্ত্রী পাখি অন্য সঙ্গী খুঁজে নিচ্ছে। অথবা অন্য সঙ্গীর সঙ্গে গোপনে প্রেম করছে। সঙ্গীর একজন পরকীয়ায় জড়ালে, অন্যজন তা কিছুতেই মানতে পারছে না। ফলে বিচ্ছেদ।
আবার এমনও দেখা যাচ্ছে, ‘লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ’ আজকাল পাখিরাও পছন্দ করছে না। পাখি দম্পতির একজন অনেক দূরে উড়ে গিয়ে আর ফিরে আসছে না। সেখানেই অন্য সংসার পাতছে। অতিথি পাখিদের ক্ষেত্রে ঠিক এ কারণে বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে।
পাখিদের বিচ্ছেদের জন্য মানুষকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। বন-জঙ্গল উজাড়ে বাস্তুহারা হচ্ছে পাখিরা। মোবাইলের মাইক্রোওয়েভ রশ্মি, টাওয়ার থেকে ভেসে আসা তরঙ্গ ও গাড়ির আওয়াজে দিশাহারা এ প্রাণী। ভাব বিনিময়ের পদ্ধতিই ভুলে যাচ্ছে। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের তৈরি দূষণে পাখিরা অতিষ্ঠ। যে কারণে তাদের সংসার পাতার ইচ্ছাও চলে যাচ্ছে।
গবেষকদের দাবি, এই অবস্থা আগামী পৃথিবীর কাছে এক অশনি সংকেতই বটে। একটা সময় আসবে যখন পৃথিবী থেকে মুছে যাবে পাখির গান। হারিয়ে যাবে সমস্ত সুরেলা পাখিরা।
এবি/আর