মুকেশ ধীরুভাই আম্বানি যিনি আম্বানি নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন একজন ভারতীয় শতকোটিপতি ব্যবসায়ী। তিনি ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ফোর্বস এ দেখা গেছে তিনি প্রায় ১১ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক, এছাড়াও তিনি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং বিশ্বের নবম তম ধনী ব্যক্তি।
মুকেশ আম্বানি ১৯৫৭ সালের ১৯ এপ্রিল ব্রিটিশ এডেন উপনিবেশে (বর্তমান ইয়েমেন) এ কোকিলাবেন আম্বানির ঘরে(মা) গুজরাটির একটি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার ছোট ভাই অনিল আম্বানিসহ আরো দুইবোন রয়েছে।
আম্বানি ইয়েমেনে খুব অল্প সময়ের জন্য বসবাস করেছিলেন কারণ তার বাবা ১৯৫৮ সালে মশলা ও টেক্সটাইলের উপর একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য ভারতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তার পরিবার মুম্বাইয়ের ভুলেশ্বরে দুই বেডরুমের বাড়িতে বসবাস করত। তারা ভারতে চলে আসার পরে পরিবারের আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল তবে আম্বানি তখনও একটি সাম্প্রদায়িক সমাজে বাস করতেন, গণপরিবহন ব্যবহার করতেন এবং কখনও ভাতা পাননি। ধীরুভাই পরে কোলাবায় 'সি উইন্ড' নামে একটি ১৪ তলা বাড়ি কিনেছিলেন, যেখানে সম্প্রতি পর্যন্ত, আম্বানি এবং তার ভাই তাদের পরিবারের সাথে বিভিন্ন তলায় থাকতেন।
মুকেশ ১৯৮৫ সালে নীতা আম্বানির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে। বড় পুত্র আকাশ আম্বানি (১৯৯১) এবং ছোট পুত্র অনন্ত আম্বানি (১৯৯৫) রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের কৌশলগত বিভাগের প্রধান। কন্যা ইশা আম্বানি জিও ও রিলায়েন্স রিটেলের বোর্ড মেম্বার। তারা মুম্বায়ে ব্যক্তিগত ২৭ তলা দালান "আন্তিলিয়া"য় বসবাস করেন। বাড়িটির মূল্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাড়িটিকে এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়েকটি বাড়ির একটি বলে উল্লেখ করা হয়।
২০১৭ সালের মার্চে রাজদীপ সারদেশাইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুকেশ বলেন তার প্রিয় খাদ্য ইদলি সামবার এবং তার প্রিয় রেস্তোরাঁ হল মুম্বায়ের কিং সার্কেলের মহীশুর ক্যাফে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সালে ইউডিসিটির ছাত্র থাকাকালীন মুকেশ মহীশুর ক্যাফেতে নিয়মিত খেতে যেতেন।
৩১ মার্চ ২০১২ আর্থিক বছর সমাপ্তিকালে মুকেশ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান হিসেবে তার বার্ষিক পারিশ্রমিক ২৪০ মিলিয়ন রুপী ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই আর্থিক বছরে রিলায়েন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোট পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেলেও তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এর ফলে তার বেতন টানা চতুর্থ বছরের মত ১৫০ মিলিয়ন রুপীতে রয়ে যায়।
তিনি ধীরুভাই আম্বানি ও কোকিলাবেন অম্বানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং অনিল আম্বানির বড় ভাই। রিলায়েন্সের মাধ্যমে তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মালিক। ২০১২ সালে ফোর্বস তাকে সবচেয়ে ধনী ক্রীড়াদলের মালিক করে উল্লেখ করে। তিনি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত বাড়ি আন্তিলিয়ায় বাস করেন। এই বাড়িটির মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীনের হুরুন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুসারে, ২০১৫ সালে আম্বানি ভারতীয় মানবহিতৌষীদের মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন।
২০১৬ সালে তিনি ফোর্বস সাময়িকীর করা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির তালিকায় ৩৮ তম স্থান অধিকার করেন, এবং এই তালিকায় তিনিই একমাত্র ভারতীয়।
২০১৮ সাল পর্যন্ত আম্বানি টানা ১২ বছর এই সাময়িকীর তালিকায় ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির স্থান ধরে রাখেন।
২০১৯ সালে ফোর্বসের বিশ্বজোড়া কোটিপতি তালিকায় ১৩ তম তিনি । তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার।
আমারবাঙলা/ইউকে