ছবি-সংগৃহীত
ফিচার

ঝালকাঠিতে শীতকালীন সবজি চাষে ধুম পড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝালকাঠি জেলায় শীতকালীন সবজি চাষের ধুম পড়েছে। কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন । কৃষকদের পরিবারগুলোতে বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে। দিনের আলো ফোটার আগে ঘুম থেকে উঠে জমিতে চারা পরিচর্যা, আগাছা পরিষ্কার ও পানি দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। শুধুমাত্র নিজেদের চাহিদাই নয়, এসব সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। তারা ভালো দাম পেতে আগাম শাক-সবজির চাষে সময় দিচ্ছেন।

কৃষকেরা ঝালকাঠিসহ আশেপাশের অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাচ্ছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও পিছিয়ে নেই, তৎপরতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করছেন কৃষি কাজে।

ঝালকাঠি জেলা জুড়ে শীতকালীন শাক-সবজির চারা বিভিন্ন হাটবাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে। জাতভেদে সবজির চারার দামও ভিন্ন ভিন্ন। পেশাদার কৃষক ছাড়াও শৌখিন ব্যক্তিরা শখ করে ছাদ কৃষি ও আঙিনা কৃষিতে ঝুঁকছেন।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ও নবগ্রামে দেখা গেছে, সবুজের সমারোহ, সবুজে ভরে উঠছে ফসলের মাঠ। সারি সারি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মুলা, করলা, পটল, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজির চারা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শোভা পাচ্ছে। মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন তারা ব্যস্ত।

দিনের আলো ফোটার আগে কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে সবজি পরিচর্যায় বেরিয়ে পড়ছেন। বিকেল পর্যন্ত পরিচর্যা করে বাড়ি ফিরছেন। এভাবে শীতকালীন সবজি নিয়ে চলছে কৃষকের সারাদিনের কর্মযজ্ঞ। বেড়েই চলছে কাজের ব্যস্ততা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ৩৬ টি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে প্রতি বছরই শীতকালীন সবজি চাষ হয়। পুরুষের পাশাপাশি সবজি চাষে নারীরাও অবদান রেখেছে। সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে ১২ মাসই সবজি চাষ হয়। নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে চাষাবাদ করেন। নারীদের সহায়তা ও বাজারজাতের কাজ করেন পুরুষরা।

ঝালকাঠিতে সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। সবজি চাষে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

জেলার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সদর উপজেলায় রবি মৌসুমে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে এবং গ্রীষ্মকালে ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। রবি মৌসুমে ৪৩ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন এবং গ্রীষ্মকালে ১৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। যা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, গ্রামগুলোর উৎপাদিত শাক-সবজি জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ও বরিশালে চালান হচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে এখন গ্রাম ঘুরে ঘুরে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বাজারে।

অনেক সময় পরিমাণে অল্প হলেও হাটে সবজি বিক্রি করতে নিয়ে যান নারীরাই। সবজির কদর সারাদেশেই আছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজিতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় গুণগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি।

সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক নারায়ণ মিস্ত্রি বলেন, ‘সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও অনেক কম। তবে সেবায় ত্রুটি করা যাবে না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় দিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব। এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে সবজি চাষকেই আমরা লাভজনক মনে করছি।’

রাজাপুরের শুক্তাগড় গ্রামের মাহিনুর বেগম জনান, গত বছর তিনি ১ একর জমিতে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন শাক ও সবজি পেয়েছেন। তা পাইকারি বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে তার।

কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলি গ্রামের সবিতা রানী হালদার জানান, একসময় গ্রামগুলোয় নারীরা এত কাজ করতেন না। তখন পেয়ারা, নারকেল, সুপারি আর সামান্য ধান আবাদ হতো। সে সময় প্রায় প্রতিটি ঘরেই অভাব ছিল। এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে কাজ করেন। এ কারণে ১২ মাস গ্রামগুলোয় সবজি চাষ হয়। অভাবও ঘুচে গেছে গ্রামের চাষিদের।

একই এলাকার সবুজ হাওলাদার জানান, কৃষাণ-কিষাণিরা সমানতালে কৃষি কাজ করছেন। নারীরা ক্ষেত সামলে সংসারের রান্নাসহ ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনার দায়িত্বও পালন করেন। ফসল সংগ্রহ, বাজারজাতকরণ এবং কৃষাণিদের জন্য নতুন নতুন সবজি ক্ষেত তৈরিসহ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন পুরুষরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, এবার শীতকালীন শাক-সবজিসহ সব রকমের ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। প্রান্তিক চাষিদের মাঝে শীতের শাক-সবজির মানসম্পন্ন বীজ এবং সার দেওয়া হয়েছে।

আশা করি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ এবং উৎপাদন হবে। কেননা কৃষকদের প্রণোদনা ও পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও মজবুত করছে বলেও জানান উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জয়ে ফিরল আর্জেন্টিনা

শেষ মুহূর্তে লাউতারো মার্টিনেজের দুর্দান্ত এক গোলে...

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে শিল্পকলায় ভাস্কর্য কর্মশালা: পরিচালনায় ভাস্কর পাপিয়া

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের তত্ত্...

এ আর রহমানের ২৯ বছরের সংসার ভাঙছে

দীর্ঘ ২৯ বছরের সংসার ভাঙছে খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ, অস...

ঝিনাইদহে সুদের টাকা না পেয়ে বাড়ি দখলের অভিযোগ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সুদের টাকা না পেয়ে এক দিনমজুরে...

গাজায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি নিহত, প্রাণহানি ৪৪ হাজার ছুঁই ছুঁই

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আরো অর্ধ...

বিনামূল্যে ৩০ হাজার মেট্রিক টন পটাশ সার দেবে রাশিয়া

বিনামূল্যে বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন পটাশ সার...

জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ...

গঠিত হলো নতুন নির্বাচন কমিশন

পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। অব...

ঢাকায় আসবেন জো বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি

চার দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্...

মহাখালীতে অটোরিকশা চালক ও সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে বিক্ষোভ করে যান চল...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা