আপনি পথিক, একটি সড়ক ধরে গন্তব্যে গেছেন। ফিরতি বেলায় দেখলেন সড়ক নেই। চারপাশে সমুদ্রের নীল জলরাশি। ভাবতে পারেন দৃষ্টিভ্রম হয়েছে। আরো ভাবতে পারেন বেভুল মন অন্য পথে চালিত করেছে আপনাকে। কিন্তু না, হঠাৎ সাগরের বুকে আবারো ভেসে উঠল সেই রাস্তা।
একি ভূতুড়ে কাণ্ড, চোখকে হয়তো বিশ্বাস করাতে পারছেন না। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ফ্রান্সে এমনই একটি রাস্তা আছে, যেটি দিনের বেশিরভাগ সময় পানির নিচে তলিয়ে যায়। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য ভেসে ওঠে মানুষের চলাচলের জন্য। এই রাস্তা পার হওয়ার জন্য শুধু সময়জ্ঞানই নয়, প্রয়োজন সাহসের। একটি ভুল আপনাকে আটকে ফেলতে পারে আটলান্টিক মহাসাগরের রুদ্রমূর্তির মাঝে; যা শুধু ফ্রান্স নয়, সারা বিশ্বে রহস্য আর বিস্ময়ের প্রতীক।
ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এই অদ্ভুত রাস্তার নাম প্যাসেজ দ্যু গোয়া; যা প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা। যেটি ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলে নোয়ারমুতিয়ে দ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে। তবে এই রাস্তার বিশেষত্ব হলো— প্রতিদিন দুইবার এটি প্রায় চার মিটার পানির নিচে তলিয়ে যায়। আর ভাটার সময় প্রায় দুই ঘণ্টার জন্য এটি আবার চলাচলের উপযোগী হয়। আর তখন অনায়েসে ছোট বড় সব ধরনের যান চলাচল করে।
এই অদ্ভুত প্রাকৃতিক চক্রের কারণেই প্যাসেজ দ্যু গোয়া সারা বিশ্বে পরিচিত। তবে এটি কেবল রহস্যময় নয়, বিপজ্জনকও। অনেক সময় পর্যটক বা স্থানীয়রা সময় ভুলে গেলে হঠাৎ জোয়ারের কবলে পড়ে যান। রাস্তার দুই প্রান্তে সাইনবোর্ডে জোয়ার-ভাটার সময়সূচি লেখা থাকে, তবু অসাবধানতাবশত গাড়ি বা পথচারী আটকে পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
তবে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কর্তৃপক্ষ রাস্তার পাশে বিশেষ উদ্ধার প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করেছে। বিপদে পড়লে মানুষ সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু পরিস্থিতি কখনো কখনো এত দ্রুত অবনতির দিকে যায় যে, উদ্ধার কাজও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
প্যাসেজ দ্যু গোয়া কেবল স্থানীয়দের জন্য নয়, পর্যটকদের কাছেও রোমাঞ্চকর। অনেকে এটি পার হওয়ার জন্য বিশেষভাবে সময় নির্ধারণ করেন। তবে স্থানীয়দের সতর্কতা খুবই স্পষ্ট— জোয়ারের সময়সূচি মেনে না চললে এই রোমাঞ্চ এক মুহূর্তেই বিপদে পরিণত হতে পারে। আটলান্টিক মহাসাগরের বোর্নিউফ উপসাগরের উপর দিয়ে বিস্তৃত এই রাস্তা প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি।
আমারবাঙলা/এমআরইউ