চলতি মৌসুমে শীত জেঁকে বসেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলায়। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কুয়াশার ঘনত্বও বাড়ছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝরাত এবং ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা রোগাক্রান্ত হচ্ছেন এ সময়ে। শীতে খেটে খাওয়া শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। হিমশীতল বাতাসে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ১০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। চলতি মৌসুমে জেলায় এটিই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীত। দিনভর কনকনে শীতে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ নওগাঁয় জেঁকে বসেছে শীত। গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা বেড়েছে দুই দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত তিন থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চা-বাগান, হাওর ও পাহাড়বেষ্টিত জেলা মৌলভীবাজারে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা নেমেছে ১১ দশমিক নয় ডিগ্রিতে। জেলাজুড়ে বেশি ঘন কুয়াশা লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে চা-বাগান ও হাওর এলাকায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে ঠান্ডায় কাজে বের হতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে পড়েছেন চায়ের জনপদের মানুষ। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন বয়স্ক ও শিশুরা।
উত্তরের জেলা দিনাজপুরে টানা কয়েকদিন ধরে ক্রমশই কমছে রাতের তাপমাত্রা। কদিন ধরে রাতের শুরু থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা পড়েছে। মিলছে না সূর্যের দেখা। ঘন কুয়াশার কারণে বেড়েছে শীতের প্রকোপ।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ১২ দশমিক নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস। এর আগে বুধবার এ জেলায় দেশের তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস
এদিকে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। অনেক বেলাতেও সূর্যের দেখা মিলছে না।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি বিভাগের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রা ১২-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। শৈত্যপ্রবাহ না হলেও তাপমাত্রা এর কাছাকাছি নামতে পারে। বৃহসম্পতিবার কুয়াশার ঘনত্ব কিছুটা বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায় এর প্রভাব কমলেও উত্তরাঞ্চলে দিনভর কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে, বুধবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী তিন দিন অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে এই সময়ের মধ্যে শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
একইসঙ্গে আজ সারা দেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ