ঢাকার বায়ু দূষণ কমানো যাচ্ছে না। বায়ুর মানের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বাতাস চলতি বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল; ছিল দুর্যোগপূর্ণ। আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার বায়ু আবার সেই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্বের ১২৬টি দূষিত শহরের মধ্যে শীর্ষে ঢাকা। এ সময় ঢাকার স্কোর ছিল ৩০৫। বায়ুর মান ৩০০ পার হলেই তাকে দুর্যোগপূর্ণ বলা হয়। সোমবার বিশ্বে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় স্থানে আছে মিসরের কায়রো; স্কোর ২১১।
বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
আইকিউএয়ারের তথ্যমতে, ঢাকার বায়ু আজ যেকোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। আজ ঢাকা ও আশপাশের যে তিন স্থানে দূষণ বেশি, এর মধ্যে আছে ইস্টার্ন হাউজিং (৫২১), পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি (৪৭৩) এবং ঢাকার মার্কিন দূতাবাস (৪২৯)।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। আজ ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি।
আজ বায়ুদূষণের যে অবস্থা, তা থেকে রক্ষা পেতে আইকিউএয়ারের পরামর্শ, ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না এবং ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
আইকিউএয়ারের স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়, আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।
২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘টানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে ঢাকার বায়ুর মান ৩০০–এর বেশি আছে। কোনো এলাকায় টানা তিন দিন তিন ঘণ্টা ধরে একটানা বায়ুর মান ৩০০–এর বেশি থাকলে সেই এলাকায় স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করা উচিত। ঢাকায় এখন যে অবস্থা, তাতে অবশ্যই জনসাধারণকে অন্তত জরুরি বার্তা দেওয়া উচিত দূষণ পরিস্থিতি সম্পর্কে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় কিংবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিন্দুমাত্র কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।’
আমারবাঙলা/এমআরইউ