ঢাকার বায়ুদূষণ ক্রমশ বাড়ছেই। আরো অনেক দূষণের ফলে ঢাকা বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার বায়ু ছিল অস্বাস্থ্যকর। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৮৬।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) প্রায় একই সময়ে ঢাকার বায়ুর মান ২৫৯। এ মানকে খুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদিন সকালে বিশ্বের ১২৬ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে।
আজ বিশ্বে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে মিসরের রাজধানী কায়রো ও ইরাকের বাগদাদ। এই দুই শহরের স্কোর যথাক্রমে ২৪১ ও ১৮৯।
বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
ঢাকার বায়ু আজ অস্বাস্থ্যকর। এই বায়ু যেকোনো মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। আজ ঢাকা ও আশপাশের যে তিন স্থানে দূষণ বেশি, এগুলো হলো ইস্টার্ন হাউজিং ২ (স্কোর ৩২৬), ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ২৮৬ ও গুলশান-২–এর রব ভবন।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। আজ ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি।
আজ বায়ুদূষণের যে অবস্থা, তা থেকে রক্ষা পেতে আইকিউএয়ারের পরামর্শ, ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরো একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
আইকিউএয়ারের স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়, আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।
২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা আইকিউএয়ার স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা আইকিউএয়ার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষণা অনুসারে, বায়ুদূষণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমেছে সাত বছর। আর রাজধানীবাসীর গড় আয়ু কমছে আট বছর করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের কারণে বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে তার অধিকাংশই বায়ু দূষণ-জনিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণ একাধিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের শিকার দরিদ্র নারী, শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তারা বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন। ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ও স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে।
এ ছাড়া গর্ভবতীদের শারীরিক ক্ষতির অন্যতম কারণ হলো বায়ুদূষণ। সমীক্ষায় দেখা গেছে, দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ