মাহবুব চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ : নদীর পাড়েই ফেলা হচ্ছে বালু। কোথাও ফেলা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী কৃষি জমিতে। বিক্রি না হওয়ায় নদীর পাড়ে ফেলে রাখা বালুতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। পাড় থেকে বালু না সরালে পুনরায় নদীতে পড়ে ভরাটের সম্ভাবনাও রয়েছে। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেকো দিয়ে সিরাজগঞ্জের ইছামতি নদী খননে সুফলের চেয়ে ক্ষতির দিকটাই সামনে আসছে বেশি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পরিকল্পিত খননে একদিকে যেমন ব্যয় কমতো, তেমনি বালু বিক্রি করে খনন খরচের কয়েক গুন টাকা রাজস্ব পেতো সরকার।
দরপত্রের তথ্য অনুযায়ী, জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা থেকে কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী পর্যন্ত ইছামতি নদী খনন কাজ শুরু করেছে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজ বাস্তবায়ন করছে ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১২০ ফুট প্রস্থ ও ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর করে খনন করা হচ্ছে নদীর ৪০ কিলোমিটার। বেকো মেশিন দিয়ে খনন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। ৪০ কিলোমিটারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রায় ৬ কোটি ৬৫ লাখ ঘন ফুট।
বেকো মেশিন দিয়ে খননের পরিবর্তে ড্রেজিং পদ্ধতিতে খনন করলে কী পরিমাণ ব্যয় হতো? এ বিষয়ে যমুনা ড্রেজিং কোম্পানির সাথে কথা বলে জানা যায়, ৪০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং পদ্ধতিতে খনন করলে প্রতি ঘনফুটে ২ টাকা করে ব্যয় হলে খরচ হতো প্রায় ১৩ কোটি টাকা। যা বেকো দিয়ে খননের অর্ধেকেরও অনেক কম।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম শীতল জানান,সরকার এক কিলোমিটার পর পর নির্দিষ্ট পরিমাপে বালু উত্তোলনের ইজারা দিলে এবং নির্দিষ্ট জায়গায় স্তুপ করে ব্যবসায়ীরা বালু বিক্রি করলে ফসলি জমির ক্ষতি হতো না। এতে নদী তীরে বালু জমাও থাকত না। নদী হয়ে উঠতো বিপুল মাছের সম্ভার। অর্থ অপচয়ও হতো না। এতে সরকারের ৫ ধরনের রাজস্ব আয় হতো।
তিনি বলেন, ৪০ কিলোমিটারে প্রায় ৬ কোটি ৬৫ লাখ ঘন ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি সেঃপেঃ টি বালুর বাজার মূল্য কমপক্ষে ৬ টাকা হলে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বিক্রি করা যেত।কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে খনন করায় বালু বিক্রিও করা যাচ্ছে না। অথচ বালু বিক্রি করে সরকার ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব পেতো।
তিনি জানান, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করা হলে ১০ বছরেও আর খননের প্রয়োজন হতো না। অন্য দিকে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার মাছের চাহিদাও পূরণ সম্ভব। নির্দিষ্ট জায়গায় ড্রেজিং করে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবহনে যেমন সহজ হবে, তেমনি বালু ইজারাতেও। এতে জেলায় বালুর চাহিদাও মিটবে।
রায়গঞ্জের নলকা এলাকার ইছামতি নদী এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ টি বেকো দিয়ে হচ্ছে নদী খনন। নদীর পাড়েই ফেলা হচ্ছে বালু। পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিতেও ফেলা হচ্ছে।
কয়াবিল গ্রামের কৃষক হান্নান মিয়া জানান, যেভাবে নদী খনন হচ্ছে। এতে বৃষ্টি কিংবা বর্ষা হলে বালুর পাড় ধ্বংসে ফের নদীতেই পড়বে। এটা কেমন খনন কিছুই বুঝতে পারছি না।
বেকো দিয়ে নদী খনন স্মার্ট পরিকল্পনা কিনা? পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, খনন কাজ আমাদের পুরনো পদ্ধতিতেই চলছে। আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।নদীর বালু ইজারা দেব,কিন্তু সংযোগ সড়ক নেই। ইজারা দিতে না পারলে কৃষকের ফসলের ক্ষতি হবে, পাড় ধ্বংসে বালু পুনরায় নদীতেই পড়বে।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন নদী পাড় থেকে অনেক অভিযোগ আসছে। আসলে নদী খনন করতে অবশ্যই স্মার্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত বলেও জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ডাক্তার জহুরুল হক রাজা বলেন, নদী খননের কাজ পরিকল্পিতভাবে ইজারা দিলে খরচের কয়েক গুন রাজস্ব পেত সরকার। নদী হয়ে উঠতো বিপুল মাছের সম্ভার। নদীর পানি ব্যবহারের ফলে কৃষকের ফসল উৎপাদনও বৃদ্ধি পেত। নদী খননে এতো সরকারি অর্থ অপচয় হতো না। প্রতি বছর নদী খনন করতে হতো না, এমনকি বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়ে কৃষকের ফসলও নষ্ট হতো না।
এবি/এইচএন