২০২৩ সালের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে একাধিক স্টেজ শো করেন সাবিনা ইয়াসমীন। এরপর আর তাকে মঞ্চে দেখা যায়নি। একসময় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে অডিও বার্তা দিতে বাধ্য হন বরেণ্য এই শিল্পী।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে সাবিনা ইয়াসমীন জানান, গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি তার অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার শেষে চার মাসে ৩০টি রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। কেবল কাছের মানুষেরাই শুধু জানতেন এসব তথ্য। সাবিনার ভাষায়, ‘এটা ছিলো কঠিন এক যুদ্ধ। তবে মনোবল ছিলো শক্ত।’
চিকিৎসা শেষে গত মে মাসে ঢাকায় ফেরেন সাবিনা। ফলোআপ করাতে এরপরও একাধিকবার সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছে। আপাতত যাওয়ার আর দরকার পড়ছে না, জানালেন তিনি।
সাবিনা বলেন, ‘চিকিৎসাটা ছিলো একটা কঠিন পরীক্ষা। জীবনযুদ্ধও বলা যায়। মনে হয়েছিল, আল্লাহ তাআলা যেটাই চাইবেন, সেটাই হবে। আল্লাহর অশেষ রহমত ও দেশবাসীর দোয়া। মনে জোর ছিল, আমি এটা কাটিয়ে উঠব। কারণ, ভালো মানের ট্রিটমেন্ট পাচ্ছি। সেই চারটা মাস জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। এই সময়ে আমার বন্ধু, ছোট বোন, যেটাই বলি না কেন, সে হচ্ছে মিলিয়া সাবেদ। সিঙ্গাপুরে রেডিওথেরাপির পুরোটা সময় ওর বাসায় ছিলাম। ওর আন্তরিক ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। মানসিক সাপোর্ট, সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমার জন্য যা করেছে, এখনো যা করে যাচ্ছে, এই জীবনে তার ঋণ শোধ করতে পারবো না।’
ভক্তদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই শিল্পী, ‘শুনেছি, অনেকে আমাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে পারবো না। তাদের দোয়া ও ভালোবাসা আমি মাথায় তুলে রাখছি। আমি যেন তাদের আশা পূরণ করতে পারি। তারাই আমার আসল শক্তি, সাহস, প্রেরণা।’
গত ৩১ জানুয়ারি ও আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুটি বড় অনুষ্ঠানে গাইবেন সাবিনা ইয়াসমীন। এরপর চট্টগ্রামেও স্টেজ শো করবেন। প্রথম অনুষ্ঠানে নিজের পছন্দের গান যেমন শোনাবেন, তেমনি উপস্থিত শ্রোতাদের অনুরোধের গানও শোনাবেন।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে গানে ফিরছি। আমি তো গানের মানুষ। ছয় দশক গানে গানে কাটছে। গান ছাড়া তো আর কিছু ভাবতে পারি না। এখানেই যত আনন্দ। সেই আনন্দের জায়গায় ফিরছি, খুবই ভালো লাগছে।’
তিনি জানান, কয়েকজন সংগীত পরিচালক নতুন গানের রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছেন। স্টেজ শোর ফাঁকে নতুন গানের রেকর্ডিংও করবেন। স্টেজ শোর প্রস্তুতি হিসেবে ২৬, ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি টানা তিন দিন যন্ত্রশিল্পীদের নিয়ে মহড়ায় অংশ নেবেন। তাঁর ভাষায়, মঞ্চে ওঠার আগে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়া।
১৯৬২ সালে রবীন ঘোষের সুরে প্রথম ছোটদের গানে কণ্ঠ দেন। এরপর তাকে আর সংগ্রাম করতে হয়নি। একের পর এক সিনেমায় গেয়েছেন, প্রকাশিত হয়েছে অ্যালবাম। নিজেকে বাংলা গানের অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে সংগীতজীবনে কখনো রেওয়াজ করা ছাড়েননি।
সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘আমার রেওয়াজ সব সময় চলে। যখন সিঙ্গাপুরে ছিলাম, মিলিয়ার বাসায়ও নিয়মিত রেওয়াজ করতাম। রেওয়াজ আমার একটা অভ্যাস বলা যায়। এখনো প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা রেওয়াজ করি। সাধারণত সকালে করি, কাজকর্ম থাকলে অন্য সময়ে করি।’
১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায় প্রথম গান করেন সাবিনা ইয়াসমীন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৩ বছর। সর্বশেষ ২০২০ সালে কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিতে কণ্ঠ দেন। শুধু তা-ই নয়, প্রথমবার সুরকার হিসেবে ছবিটির চারটি গানের সুরও করেন সাবিনা ইয়াসমীন। দীর্ঘ সংগীতজীবনে এটিই তার একমাত্র সুর ও সংগীত পরিচালনা।
আমারবাঙলা/জিজি