বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খান নিজ বাড়িতে হামলার শিকার হন। ওইদিন গভীর রাতের ঘটনা এবং হামলাকারীর প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন অভিনেতার বাড়ির পরিচারিকা ইলিয়ামা ফিলিপ আলিয়াস লিমা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, চার বছর ধরে বলিউড অভিনেতা সাইফ ও তার স্ত্রী, বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুরের সন্তানদের দেখভাল করছেন লিমা। তাই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি। হামলাকারীকে খুঁজে পেতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও দেন।
পুলিশের কাছে লিমার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি তথ্য হলো- হামলাকারীর বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তার গায়ের রঙ কালো। হামলাকারীর শারীরিক গড়ন পাতলা। অভিযুক্তের শারীরিক উচ্চতা হবে প্রায় পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। হামলার দিন হামলাকারীর পরনে ছিল গাঢ় রঙের প্যান্ট এবং মাথায় ক্যাপওয়ালা শার্ট।
পুলিশের কাছে লিমা জানান, আবারো যদি তিনি হামলাকারীকে দেখেন তবে ঠিক চিনে নিতে তার ভুল হবে না।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাত ২টা নাগাদ মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাড়িতে দুর্বৃত্তের হাতে ছয়বার ছুরিকাঘাতের শিকার হন সাইফ। ওই রাতে ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে লিমা জানান, হামলাকারীর টার্গেটে ছিল সাইফের শিশুসন্তান। ছোট ছেলে জেহকে টার্গেট করে এক কোটি রুপি নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল হামলাকারীর।
লিমা বলেন, বুধবার রাত ২টা নাগাদ তাই বাড়ির বাইরের একটি পাইপ বেয়ে ফ্ল্যাটে ঢোকে হামলাকারী। ওই রুমে ঘুমিয়ে ছিল সাইফ-কারিনার দুই সন্তান তৈমুর ও জেহ (জাহাঙ্গীর)। গভীর রাতে তৈমুর ও জেহরের রুমে আওয়াজ হওয়ায় জেগে যাই আমি। সন্দেহজনক শব্দ হওয়ায় পাশের রুমে ছুটে যাই।
লিমা বলেন, হামলার তিন ঘণ্টা আগে জেহ ঘুমিয়ে পড়ে। সবশেষ আমি যখন জেহর ঘর বাইরে থেকে দেখি, তখন বাথরুমের দরজা খোলা ও আলো জ্বালানো ছিল।
লিমা আরো বলেন, বাথরুমের দরজা খোলা ও আলো জ্বালানো দেখে আমি প্রথমে ভাবি হয়তো কারিনা কাপুর খান ছোট ছেলেকে দেখতে এসেছেন যে জেহ ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে কিনা। তাই আমি পাশের রুমেই ঘুমাতে যাই। কিন্তু ঘরে যেতেই আওয়াজ শুনে আমার মনে সন্দেহ হয়। তাই আমি দ্রুত জেহর ঘরে আসি এবং দেখি, একজন লোক বাথরুম থেকে বের হয়ে জেহর ঘরে ঢুকছে।
লিমা জানান, হামলাকারীর মুখোমুখি হলে হাতের আঙুলে ইশারা করে তাকে চিৎকার না করতে বলে। লিমা দ্রুত জেহকে কোলে তুলে নেন এবং চিৎকার করে পরিবারের সব সদস্যকে জাগিয়ে তোলেন। এতে হামলাকারী প্রথমে লিমাকেই ছুরি দিয়ে আঘাত করে। ডান হাতের কবজিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার পর কাঠের লাঠি দিয়ে লিমাকে আঘাত করে হামলাকারী। ওই সময় ঘর থেকে কাঁদতে কাঁদতে জেহ দৌড়ে পালায়।
তিনি আরো জানান, ভয় পেয়ে জেহ জোরে জোরে কান্না করতে শুরু করলে সে চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসেন সাইফ। সঠিক সময়ে দুই সন্তানকে সরিয়ে নেন। পরিচারিকাকে বাঁচাতে সিনেমার নায়কের মতোই সাইফ ঝাঁপিয়ে পড়েন হামলাকারীর ওপর। এতে হামলাকারী ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছয়বার কোপান অভিনেতাকে।
আরো জানা যায়, রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটার সময় অভিনেতার পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে খবর দেন। দুর্বৃত্তকে ধরার চেষ্টাও করেন। কিন্তু শেষমেষ পালিয়ে যায় সে।
পরে হামলার শিকার সাইফকে দ্রুত ভর্তি করা হয় লীলাবতী হাসপাতালে। সেখানে সফল অস্ত্রোপচারের পর শঙ্কামুক্ত সাইফকে প্রথমে আইসিইউতে রাখা হয়। এরপর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে স্থানান্তর করা হয়। তবে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও মেরুদণ্ডের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে সাইফের ক্ষত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ মুহূর্তে তাই লীলাবতী হাসপাতালেই চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন অভিনেতা।
আমারবাঙলা/এমআরইউ