অর্থহীন ব্যান্ডের সাবেক লিড গিটারিস্ট মিনহাজ আহমেদ পিকলু আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয় তার মৃত্যু হয়।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর রাজধানীর ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। এ গিটারিস্টের বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন। পরিবারের সদস্যরা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
পিকলুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিপার জানান, রাজধানীর রামপুরায় গিটার প্রশিক্ষণের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন পিকলু। অনুষ্ঠান শেষে নিজেই গিটার নিয়ে জ্যামিং করেন। পারফর্ম করার সময় অসুস্থতা অনুভব করেন। অনুষ্ঠান শেষে চেয়ারে লুটিয়ে পড়েন। এরপর স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সিপার আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন পিকলু। চলতি বছরের শুরুর দিকেও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ভুবনে পরিচিত নাম ছিল পিকলু। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি হার্ডরক ঘরানার ব্যান্ড রকস্ট্রাটা ও জলি রজারসে গিটার বাজাতেন। নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে কিছুদিন তিনি ওয়ারফেজ ব্যান্ডে যোগ দেন।
তিনি মাকসুদ ও ঢাকা এবং অর্থহীন ব্যান্ডেও গিটার বাজিয়েছেন। অর্থহীনের জনপ্রিয় গান ‘অদ্ভুত সেই ছেলেটি’, ‘সূর্য’, ‘রাতের ট্রেন’, ‘গুটি’, ‘নির্বোধ’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানে গিটার বাজিয়েছেন পিকলু। অর্থহীনের অ্যালবাম ‘ত্রিমাত্রিক’, ‘বিবর্তন’, ‘ধ্রুব’তে লিড গিটার বাজিয়েছেন তিনি। প্রয়াত সংগীতশিল্পী নিলয় দাশের শিষ্য ছিলেন পিকলু।
জনপ্রিয় এই গিটারিস্টের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংগীতাঙ্গনে। পিকলুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ওয়ারফেজ ব্যান্ডের গিটারিস্ট ইব্রাহিম আহমেদ কমল, সংগীতশিল্পী রাফা, এলিটা করিমসহ অনেকেই। এভেয়ড রাফা নামে পরিচিত ব্যান্ড তারকা রায়েফ আল হাসান রাফা ও অর্থহীনের সাবেক ড্রামার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গিটারিস্টের মৃত্যুর কথা জানিয়ে লিখেছেন, ‘পিকলু ভাই আর নেই। কিছুক্ষণ আগে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি এই শব্দগুলি লিখছি। আপনারা যারা জানেন না তাদের জন্য, পিকলু ভাই ছিলেন অর্থহীনের আসল গিটার বাদক, কিন্তু আমার কাছে তিনি তার চেয়ে অনেক বেশি।’
পোস্টে তিনি আরো লিখেছেন, ‘পিকলু ভাই ছিলেন আমার প্রথম পরামর্শদাতা, যিনি অন্য কারো আগে আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে সঠিকভাবে গিটার বাজাতে হয়, কীভাবে সত্যিকার অর্থে সংগীত অনুভব করতে হয় এবং কীভাবে নিজেকে একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে বহন করতে হয়। কিন্তু এর বাইরেও তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে মঞ্চে থাকতে হয়, কীভাবে দর্শকদের সামনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে হয়, যখন আমি তরুণ এবং অনিশ্চিত ছিলাম। আমার এখনো মনে আছে যখন তিনি মধ্য-পারফরম্যান্সে ঝুঁকে পড়তেন এবং আমার কানে রসিকতা করতেন, ছোট ছোট জিনিস আমাকে শান্ত করতে এবং যখন আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম, তখন আমাকে হাসাতেন।’
পোস্টে রাফা আরো লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন এই দেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান গিটারিস্টদের একজন। তিনি গুটি, অদ্ভুত সেই ছেলেটির মতো আইকনিক গানগুলো বাজিয়েছেন এবং রচনা করেছেন, যে গানগুলো আমাদের স্মৃতিতে খোদাই করা আছে, যেগুলো প্রজন্মকে আকৃতি দিয়েছে। আমরা আজ একজন নায়ককে হারালাম।’
আমারবাঙলা/এমআরইউ