বিনোদন
নির্দেশনা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়

বিবেকানন্দ থিয়েটারের ‘উত্তরণ’ নাটকের চার প্রদর্শনী

বিনোদন প্রতিবেদক: তারণ্য নির্ভর নাট্য সংগঠন বিবেকানন্দ থিয়েটারের প্রশংসিত প্রযোজনা ‘উত্তরণ’। একাধিক মঞ্চায়নের পর ইতোমধ্যে নাটকটি দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে। নিয়মিত প্রদর্শনের ধারাবাহিকতায় এবার নাটকের টানা চার প্রদর্শনী করতে যাচ্ছে দলটি। এর মধ্যে আজ ৩০ ডিসেম্বর ৫-৩০ মিনিট ও সন্ধ্যা ৭-৩০ মিনিট, কাল ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় বছরের শেষ শো এবং আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৪ সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে ‘উত্তরণ’ নাটকের বছরের প্রথম প্রদর্শনী হবে। বিবেকানন্দ থিয়েটার প্রযোজিত ‘উত্তরণ’ নাটকটি রচনা করেছেন অপূর্ব কুমার কুন্ডু। নির্দেশনা দিয়েছেন শুভাশীষ দত্ত তন্ময়।
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, শান্তনু সাহা, তারক নাথ দাস, অমিতাভ রাজীব, এস এম মাশফিক আহমেদ, এ আর কিবরিয়া, সুমিত চন্দ্র দাস, হিমেল হিমু রতন মোহন বিশ্বাস, ফাহতিন মাহতাব হক। নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা ফজলে রাব্বি সুকর্ন, আলো পলাশ হেনড্রী সেন, পোস্টার ও আবহ সঙ্গীত- হামিদুর রহমান পাপ্পু কোরিওগ্রাফি- কামরুল হাসান ফেরদৌস, পোশাক ও রূপসজ্জা-শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, দ্রব্য সামগ্রী- শরিফুল ইসলাম মামুন, মঞ্চ ব্যাবস্থাপনা- এস এম মাসফিক আহমেদ, টিকিট ব্যাবস্থাপনা- শফিকুল ইসলাম, ইভানা মেঘলা, এ আর কিবরিয়া, মিলনায়তন ব্যাবস্থাপনা- ঝিনুক হালদার, ইভানা মেঘলা, দেবদ্বীপ দত্ত, মনন সরকার পূজন। বিশেষ কৃতজ্ঞতা ড. আইরিন পারভীন লোপা, মোতালেব হোসেন, শাকিল আহমেদ, প্রযোজনা অধিকর্তা- রেখা রানী গুণ।
নাটকের কাহিনীতে তুলে ধরা হয়েছে, আমেরিকার বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রদত্ত বক্তৃতার অনেক কথার একটি কথা ছিল, ‘পাপী ! মানুষকে পাপী বলাই সব থেকে বড় পাপ’। পূণ্যের পথে যারা আছেন, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র-আর্ন্তজাতিক পরিসরে যারা এটিয়ে আছেন তারা সর্বক্ষেত্রে- সর্বজনীন ভাবে মূল্যায়িত, প্রশংসিত। তারা সকলের কাছে আদৃত। কিন্তু যারা সুযোগের অভাবে, একট সুস্থ-স্বাভাবিক ভরন পোষনের অভাবে কিংবা বাধ্য বাধকতায় পথ ভ্রষ্ট, বিপথগামী তারাতো সর্বক্ষেত্রে-সর্বজন দ্বারা পরিত্যক্ত, অছুত, ঘৃনিত এবং অবমূল্যায়িত। অথচ তারাও তো স্বপ্ন দেখে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে যেতে, পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের কাছে আদৃত হতে বিংবা একটু বিশুদ্ধ পরিমন্ডলে আর দশজন মানুষের মতো সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে বাঁচতে। এমন একজন মানুষ উত্তরণ যেতার পঙ্কিল জীবন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চায়, প্রচলিত পথ ভ্রষ্ট জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, দুহাত দিয়ে কুয়াশার মতো ঘিরে ধরা অন্ধকারকে সরিয়ে আলোর পথের যাত্রী হতে চায়। কিন্তু মানুষের ভীড়ে, মানুষের নির্ধারিত অভিসম্পাতের মাঝে দাঁড়িয়ে উত্তরণরা কি শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পায়! কেউ কি পথ প্রদর্শক হয়ে তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবার পথ দেখিয়ে দেয়! উত্তরণদের কি শেষ পর্যন্ত জীবনে উত্তরণ দেখা দেয় এই নিয়েই নাটক উত্তরণ। নাটক উত্তরণ মনুষত্ব্যের উত্তরনের পথে একটু একটু করে পথ চিনে চিনে, পথ পরিদর্শকের প্রজ্জ্বলিত আলোয় একটু একটু করে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়ে, এক সীমানার প্রান্ত ছুয়ে সম্মুখে এগিয়ে যায় যেখানে তার মনোজগতের সম্বল,‘পাপী! মানুষকে পাপী বলাই সব থেকে বড় পাপ কারণ অসাধুর মাঝেও সাধুত্বের বীজ লুকিয়ে থাকে’। নাটক উত্তরণ পথভ্রষ্ট মানুষকে অলি-গলি পেরিয়ে রাজপথের যাত্রী হওয়ার পথের তাড়ানায় তাড়িত করে সম্মুকে এগিয়ে নেয়। আর সেখানেই উত্তরণ উত্তরণ হয়ে দেখা দেয়।
নাট্যকার অপূর্ব কুমার কুন্ডু বলেন, নাটক উত্তরণ একদল পথভ্রষ্ট মানুষের দিকহীন দিশাহীন পথে পথে পথ চলা। তাদের চলতি পথ কৌশলী, কল্পনা নির্ভর কিন্তু পুনঃপুনঃ আক্রান্ত হয়ে মরা বাঁচার মধ্যবর্তী খাদ বেয়ে বেয়ে চলা। তারা বোঝে তাদের চলতি পেশা হীন, মন্দ, লোক সমাজ দ্বারা ঘৃণিত তবু তারা মনের দৃঢ়তার অভাবে এই পেশার বৃত্তির গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। অথচ তারা চায় সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর জীবনে অবগাহন করতে, অপরাপর মানুষদের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দাঁড়াতে। একদিকে নিকৃষ্ট জীবিকায় জীবন ধারণ অপরদিকে মনের দিক দিয়ে দায়িত্ব শীল ভ‚মিকায় অবতারনের প্রবল ইচ্ছার টানা পোড়েনের কেন্দ্রিয় চরিত্র নাটক উত্তরণ এর উত্তরণ। অয়দিপাউসের নিয়তির মাঝে সত্যেন্বেষন, হ্যামলেটের অন্যায় না করেও শাস্তি গ্রহণ, বিল্বমঙ্গল এর লোভ থেকে ব্যাক‚লতায় আরহন সেসবের প্রবাহমানতা নিয়েই আজকের সময়ে আজকের ‘উত্তরণ’। এই উত্তরণ অনেকটা বৃক্ষের মতন, যার শিকড় মাটির তলে অন্ধকারে পচা মাটিতে অথচ যে ডালে ডালে ফুলে ফলে ধরিত্রীকে রঙ্গিন করে, নিজের জীবনকে স্বার্থক করে। পচা মাটি এখানে উত্তরণদের জীবিকা আর ফুল ফল তাদের জীবন বোধ এবং বোধ থেকে উচ্চারিত সংলাপ। যান্ত্রিক-জটিল এবং দোদুল্যমান এই সময়ে ফ্রান্সের নাট্যকার মলিয়র যেভাবে দর্শকদের বিশুদ্ধ বিনোদনে বিনোদিত করে, নাট্যকার মনোজ মিত্রের নাটকীয় সংলাপ যেভাবে দর্শকদের হাসির ফোয়ারায় ¯স্নাত করে, মেঘনাদ বধ খ্যাত অভিনেতা গৌতম হালদারের নান্দনিক অভিনয় যেভাবে দর্শকদের মনোজগতে ভিন্ন ভিন্ন কাল্পনিক বিস্ময়কর জগৎ তৈরি করে তেমনি নাটক উত্তরণের চরিত্রদের নাটকীয় অঙ্গভঙ্গি এবং কথোপকথোন, দর্শক-শ্রোতাদের একঘন্টা সময়কে জ্ঞান-বোধ-বিনোদন বিবেচনায় অর্থপূর্ণ করবে বলেই বিশ্বাস। শুভাশীষ দত্ত তন্ময় প্রধানত স্বতস্ফুর্ত অভিনেতা, অপরিনত বয়সে পিতাকে হারিয়ে বিশাল পরিবারের সমান্তরাল থিয়েটার পরিবারের রূপসজ্জ্বার দায়িত্বভার ধারাবাহিক ভাবে পালন করে বিশ্বস্ত নাট্য কর্মী, বিবেকানন্দ থিয়েটার দল এবং দলীয় নাট্যকর্মীদের নিয়ে উত্তরণ নাটক নির্দেশনায় আজ সে দর্শকদের কাছে পরিক্ষার্থী। পরীক্ষা আজ আমাদের সবার। আমরা একটু প্রাণ খুলে হাসতে চাই, বোধে চোখ ভেজাতে চাই, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গায় উত্তরণ এর সাক্ষী হতে চাই। এ আমাদের অধিকার, আমরা আঁধার পেরিয়ে আলোর পথযাত্রী হতে চাই। বর্নিল আলোয় আঁধার ঘুচিয়ে, জীবন উদযাপনের আবহে, বাঁচার মত বেঁচে উঠতে চাই।
নির্দেশক শুভাশীষ দত্ত তন্ময় বলেন, বিবেকানন্দ থিয়েটারের বিগত প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জন, উইলিয়াম শেক্সপিয়রের টেম্পেস্টসহ মোট বাইশটি। সকল ক্ষেত্রেই নাটকের নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলাম আমি। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের তেইশতম প্রযোজনা অপূর্ব কুমার কুন্ডুর রচনায় নাটক ‘উত্তরণ’। নাট্যকার রচিত বিগত নাটক ‘হেলেন কেলার’, ‘মাইকেল মধুসূদন’, ‘শেখ সাদী’ কিংবা ‘কালিদাস’ ইতিমধ্যে দর্শক প্রিয়তা পেয়েছে। বিবেকানন্দ থিয়েটারের হয়ে নাট্যকারের কাছে চাওয়া ছিল, দলগত অভিনয় উপযোগী নাটক এবং কাল্পনিক চরিত্রের সম্মিলনের নাটক। পাশাপাশি হাস্যরস এবং জীবন বোধের উপলব্ধি নিয়ে জীবন মুখী আশাব্যঞ্জক নাটকই আমাদের যে কাম্য, সেটিও ছিলো নাট্যকারের প্রতি আমাদের চাওয়া। তিনি আমাদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর করণীয় কাজটা করেছেন। আমিসহ এই নাটকের অভিনেতারা সমবেতভাবে চেষ্টা করেছি, দর্শকদের সামনে জীবন্ত অনুভ‚তি ফুটিয়ে তুলতে। অভিনয়ে জড়তা কাটিয়ে সাবলিল অভিনয় রীতিকে প্রাধান্য দিতে। ফজলু রাব্বী সুকর্ন যে সেট নির্মাণ করেছে সেখানে নাকটির স্থান নিরপেক্ষতা যেমন দৃশ্যমান তেমনি নাটকের গাঁথুনির বুননির ধারাবাহিকতাও বিশ্বস্ত। পলাশ হেন ড্রি সেনের লাইটে চরিত্রের মনো লোকের একটা মানচিত্র ফুটে ওঠে। নাটকের কস্টিউম নাটকের মূল হাস্যরস ও জীবন বোধের সাদৃশ্য মিলেমিশে একাকার। কোরিওগ্রাফার কামরুল হাসান ফেরদৌস এর কোরিওগ্রাফী কায়িক পরিশ্রমের এবং স্বতস্ফুর্ততার সমন্বয়। হামিদুর রহমান পাপ্পুর আবহসংগীত মানব মনের দোত্যনা ব্যাঞ্জনাময়। অভিনয়-নির্দেশনা এবং দলের সামগ্রিক কর্ম সম্পাদনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেও আমার সামগ্রিক ভাবনায় ছিল এবং আছে যেটি সেটি হলো, নৈরাশ্যের বিপরীতে আশা, ভাঙ্গনের বিপরীতে গড়ন এবং মুখ ভারীর বিপরীতে হাস্যজ্জ্বল মুখ ফুটিয়ে তুলতে, সাধ্যের অতীত যথাসাধ্য দিয়ে নাটক উত্তরণ সাজিয়ে গুছিয়ে উপাদেয় করে দর্শক- শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপিত করা। এখন উপস্থাপিত হতে চলেছে, আাপনারা সুধী দর্শক, আপনারই আমাদের পরম আরাধ্য এবং আপনাদের সামনেই আমাদের সব প্রচেষ্টার নিবেদন। আপনারা গ্রহণ করুন এবং আমাদের সম্মুখে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিন। আমরা বিবেকানন্দ থিয়েটার, আমরা আমাদের সবটুকুক মেধা-শ্রম ও সামর্থ নিয়ে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং আর্শীবাদে তুষ্ট হতে চাই আমরা।

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

গণপিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলী...

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর...

লেবাননে ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ, নিহত ২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লেবাননের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস কমিউন...

আবারও রিমান্ডে সালমান-আনিসুল হক 

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি...

আশুলিয়ায় আজও বন্ধ ২২ কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা...

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত আগস্ট মাসে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা...

কারাগার থেকে পালানো আসামি গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো মৃত্...

বিভিন্ন খাত সংস্কারে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা...

আশুলিয়ায় আজও বন্ধ ২২ কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা...

ঢাবির হলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা