বিনোদন ডেস্ক: কিংবদন্তি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যু অসংখ্য ভক্ত-দর্শকরা মেনে নিতে পারেননি। মৃত্যুর ২৭ বছর পূর্ণ হলেও আজও স্মৃতিতে অমলিন এই ক্ষণজন্মা অভিনেতা। তার সহকর্মীরাও ভক্ত-দর্শকের পাশাপাশি এই মহানায়কের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন।
আজ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রয়াত এ নায়কের মৃত্যুবার্ষিকী।
বছর ঘুরে এই বিশেষ প্রয়াণ দিবস সামনে এলে যেন নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। তাই তো সে নিজের অনুভূতি প্রকাশে কোনোকালেই রাখঢাক রাখেননি।
চিত্রপুরীতে সে সময় সালমান-শাবনূর জুটি নিয়ে প্রেমের গুঞ্জন ছিল। নায়কের আত্মহত্যার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে শাবনূরের সাথে ঘনিষ্ঠতা, যা নিয়ে পরবর্তীতে সামিরার সাথে দাম্পত্য কলহের কথা উল্লেখ করে পিবিআই।
এসব আলোচনাকে পায়ে ঠেলে নিজের প্রয়াত সহকর্মীকে স্মরণ করলেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। সালমানের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সামাজিকমাধ্যমে এ অভিনেত্রী লেখেন, ‘কোথায় হারিয়ে গেলে সালমান? তোমার স্মৃতিগুলো আজও কাঁদায় আমায়।’
সালমানের আত্মার শান্তি কামনা করে শাবনূর আরও লেখেন, ‘আজ (৬ সেপ্টেম্বর) অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী।
দীর্ঘ ২৭ বছর পর তাকে এখনো ভুলতে পারেনি চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষ ও তার অনুরাগীরা। যেখানে আছো, ভালো থেকো স্বপ্নের নায়ক। তোমার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ’র মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঐ সময় বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন সালমানের বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যার অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি।
২০২০ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে সালমানের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সংস্থাটির দাবি, সালমানকে হত্যা করা হয়নি, নায়িকা শাবনূরের সাথে তার সম্পর্কের জের ধরে পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যা করেন তিনি। তাদের এ দাবি মানতে নারাজ নায়কের পরিবার ও তার ভক্তরা।
সালমান শাহ:
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কিংবদন্তি জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ''চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন"। তিনি বাংলাদেশের সিলেট শহরে দাড়িয়া পাড়াস্থ তার নানা বাড়ি আব এ হায়াত ভবনে জন্মগ্রহণ করেন, যা এখন সালমান শাহ্ ভবন হিসেবে পরিচিত। তার পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী।
তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তার জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে সালমান শাহ বলেই পরিচিত ছিলেন।
সালমান পড়াশুনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন।
পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ) থেকে বি.কম. পাস করেন।
সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন। সামিরা হক ছিলেন একজন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের ২ টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেন।
টেলিভিশন নাটক দিয়ে তার অভিনয়জীবন শুরু হলেও ১৯৯০-এর দশকে তিনি চলচ্চিত্রে অন্যতম জননন্দিত শিল্পী হয়ে উঠেন। ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়।
একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি সর্বমোট ২৭ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সবকয়টিই ছিল ব্যবসাসফল। তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
সালমান ১৯৮৫ সালে বিটিভির আকাশ ছোঁয়া নাটক দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করেন। পরে দেয়াল (১৯৮৫), সব পাখি ঘরে ফিরে (১৯৮৫), সৈকতে সারস (১৯৮৮), নয়ন (১৯৯৫), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬) নাটকে অভিনয় করেন।
নয়ন নাটকটি সে বছর শ্রেষ্ঠ একক নাটক হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া তিনি ১৯৯০ সালে মঈনুল আহসান সাবের রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত পাথর সময় ও ১৯৯৪ সালে ইতিকথা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন।
সালমান শাহ মৃত্যুর আগে মন মানে না ছবির ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন। তার মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক রিয়াজকে দিয়ে ছবিটি করানো হয়। এছাড়াও কে অপরাধী, তুমি শুধু তুমি, প্রেমের বাজি সহ একাধিক মুভি সালমান শাহ অর্ধেক শুটিং করে মারা যান।
পরবর্তীতে প্রেমের বাজি ব্যতীত বাকি সিনেমাগুলি অন্য নায়কদের দিয়ে নতুন করে শুটিং করা হয়। সালমানের অসমাপ্ত সিনেমার মধ্যে একমাত্র প্রেমের বাজি সিনেমার কাজ পরে আর শেষ হয়নি।
সালমান শাহ তার অভিনয় ও সুদর্শন চেহারার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির মাধ্যমে তার অভিনয় জগতে প্রবেশ। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সালমান শাহ কপালে রুমাল বাধতেন। পরবর্তীতে দেখা যায় তার এই রুমাল বাধা তৎকালীন তরুণ সমাজের মধ্যে ট্রেন্ডে পরিণত হয়ে যায়।
এবি/এইচএন