ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুর ঘটনায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল পৌনে সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করাসহ আট দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের কর্মসূচি চলাকালে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হবে না।
অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই কাঠামোগত হত্যার যথাযথ বিচার করতে হবে; পর্যাপ্ত সড়কবাতি, ফুটপাত ও গতিরোধক স্থাপন করতে হবে এবং যানবাহনের গতি পরিমাপ রাখতে হবে; নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; মেডিক্যাল সেন্টারের জরুরি সেবার মানোন্নয়ন করতে হবে; নিবন্ধনহীন সব যানবাহন ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে; সব রিকশাচালকের প্রশিক্ষণ থাকা সাপেক্ষে নিবন্ধন দিতে হবে; অদক্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের প্রত্যাহার করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল করতে হবে।
ব্লকেড কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দুর্বার আদি বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল ক্যাম্পাসের মেডিক্যালে উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। একজন শিক্ষার্থী যদি ক্যাম্পাসে আহত হন, তাকে ক্যাম্পাসের মেডিক্যালে নেওয়ার পর তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা। আফসানার ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। এটিকে প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে হবে। ক্যাম্পাসে শুধু রিকশা নয়, মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপও নেই। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আমরা জাহাঙ্গীরনগর ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছি।
ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী লামিশা জামান বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, সেটিকে আমরা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলে চিহ্নিত করছি। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা আট দফা দাবি জানিয়েছি। আজকের কর্মসূচি সকাল পৌনে সাতটার দিকে শুরু করেছি। এর আগে বিভিন্ন হলে হলে মাইকিং করেছি আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে আট দফা দাবি জানান এবং এ ঘটনায় এস্টেট শাখার প্রধানকে দায়ী করে তাকে বহিষ্কারের জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এদিকে, দুর্ঘটনায় জড়িত অটোরিকশা চালককে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থী যে একমাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছে, তার এই স্বপ্নের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। এরকমভাবে কারো মৃত্যুই কাম্য নয়। আমরা শোকাহত। অভিযুক্ত রিকশাচালককে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যানবাহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করছি।
এদিকে জাবি প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেছেন, আমার পক্ষে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বাইক ও রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। ক্যাম্পাসে অসংখ্য অনিবন্ধিত অটোরিকশা ও বাইক চলে। কোনটা শিক্ষার্থীদের বাইক আর কোনটা বহিরাগতদের বাইক তা চেনা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আমারবাঙলা/এমআরইউ