নিজস্ব প্রতিবেদক: মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তাগণ যুগোপযোগী সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক শিশু নীতি প্রণয়ণ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে তার প্রতিফলন ঘটছে সমাজে।
১৯৬২ সালে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা যে গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল এবং সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবি করেছিল বাংলাদেশের জনগণ, তা আজও অপুর্ণ রয়ে গেছে।
বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার বদলে হেফাজতসহ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সাথে আপোষকামীতায় সরকার শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িককরণ করেছে। বিগত পঞ্চাশ বছরে শিক্ষা ব্যবস্হায় চলছে শিক্ষার সাম্প্রদায়িককরণ ও বাণিজ্যিকিকরণের নীতিমালা। এতে ধ্বংস প্রায় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্হা।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলন কর্তৃক মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তাগণ এ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সর্বজনীন গণমুখী বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন : বর্তমান প্রেক্ষিতে, নাগরিক ভাবনা " শীর্ষক সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলনের আহ্বায়ক একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ সেলিম এর সভাপতিত্বে, সদস্য সচিব রুস্তম আলী খোকনের সঞ্চালনায় এ সেমিনারে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ এন রাশেদা, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কণা, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, লেখক আলী আকবর টাবি, সাবেক ছাত্রনেতা ও পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলসহ প্রমুখ আলোচকগণ।
আলোচনায় শিক্ষা ক্ষেত্র সহ সমাজের অসংগতি ও অরাজকতা নিরসনে সঠিক শিক্ষা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তারা বলেন ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতি সমাজের দাবি পূরণে সম্পুর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে।
এখানে ধর্মীয় শিক্ষা যেমন ধর্মান্ধ মানুষ সৃষ্টি করছে তেমনি আধুনিক শিক্ষার নামে ইংরেজি শিক্ষা বাঙালী জাতির চেতনা পরিপন্থী আরেক ধরণের মানুষ সৃষ্টি করছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈতিকতার মান এমন পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠিান যুগোপযোগী বিজ্ঞান মনস্ক যুক্তিবাদী সৎ আদর্শিক মানুষ গড়ে তুলতে যথাযথ ভুমিকা পালন করতে পারছে না।
মুল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ড. কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশন সংবিধানের চার মুলনীতির সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে লক্ষ্য স্হির করেছিল।তাতে জাতীয়তাবাদ,সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, দেশাত্মবোধও আলোকিত নাগরিকত্ব, নৈতিক মুল্যবোধ, সামাজিক রূপান্তরের হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, কায়িক শ্রমের প্রতি যথাযথ মর্যাদা, প্রাতিষ্ঠানিক ও নেতৃত্বের দক্ষতা, মৌলিক গবেষণা ও সামাজিক অগ্রগতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য শিক্ষা সন্নেবেশিত ছিলো।
আলোচকবৃন্দ বলেন, একটি বিজ্ঞান মনস্ক যুক্তিবাদী তরুণ তরুণীর সমাজের বদলে সরকারসমুহ পশ্চাৎপদ সমাজ গড়ে তুলেছে। হেফাজতের নিকট সব সরকারই আত্নসমর্পণ করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে কারিগরী শিক্ষার বদলে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে এমন এক সমাজ গড়ে তোলা হয়েছে, যে সমাজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মতন যুগান্তকারী বৈশ্বয়িক পরিবর্তন মোকাবিলায় পুরোপুরি অক্ষম।
আলোচকরা আরও বলেন, একটি মননশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সকল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য একই ধারার শিক্ষানীতির বিকল্প নেই। কোন একটি গোষ্ঠীকে খুশি করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করা এই দেশকে শোষণহীন বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক ধারায় পরিচালনা করা অসম্ভব।
বিগত বাহান্ন বছরে আমরা এই শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা একটি দুর্নীতি পরায়ণ ও সাম্প্রদায়িক বিকাশের ধারাকেই বিকশিত হতে দেখেছি। আজকে আমাদের নতুনভাবে সমাজকে বিশ্লেষণ করে তা মেরামত করতে হবে আর তার জন্য চাই একটি বিজ্ঞানমনস্ক সার্বজনিন একইধারার শিক্ষানীতি।
এবি/এইচএন