বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের চেহারাসদৃশ একটি অশ্লীল ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত শনিবার ‘ইবির ত্রাস’ নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। চাকরির প্রলোভনে নারীর সঙ্গে রেজিস্ট্রার অশ্লীল কর্মকাণ্ড করছেন বলে পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, রেজিস্ট্রারের চেহারা সদৃশ্য ব্যক্তি একজন নারীর সঙ্গে নগ্ন অবস্থায় আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করছেন। ভিডিওর ওই নারীকে শনাক্ত করা যায়নি।
এদিকে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন রেজিস্ট্রার।
এদিকে রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন সময়ে লেনদেন সংক্রান্ত অডিও ও সর্বশেষ নগ্ন ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও তাকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম।
রোববার সংগঠনটি জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভা শেষে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই দাবি জানানো হয়। চিঠিতে তারা বলেন, রেজিস্ট্রার পদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। পদাধীকারবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সভা ও দাপ্তরিক কাজে উপস্থিত থাকতে হয়। এমন একটি অশ্লীল ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার ফলে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সভা ও দাপ্তরিক কাজে তার উপস্থিতি একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
এমতাবস্থায় প্রকাশিত ঘটনার সত্যতা উদঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্ট্রার পদ থেকে তাকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান ও সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া রেজিস্ট্রারের এক ঠিকাদারের সঙ্গে অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে একটি অডিও প্রকাশিত হওয়ার ফলে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির তদন্ত রিপোর্ট এখনো প্রকাশ হয়নি। সেই রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশ করার দাবি জানান তারা।
ভিডিওটি প্রকাশের পর ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের একের পর এক এমন কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মান চরমভাবে ক্ষুন্ন করছে বলে দাবি সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। আইটি বিশেষজ্ঞ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সহায়তায় ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও রেজিস্ট্রারের কণ্ঠসদৃশ্য নিয়োগ বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতি সংক্রান্ত অন্তত ২০টি অডিও রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ থেকে অডিওগুলো পোস্ট করা হয়। এগুলো এডিটেড (সম্পাদিত) দাবি করে থানায় জিডি করে কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি হলেও কোন সুরাহা হয়নি।
যেসব ভুয়া ফেসবুক পেইজ ও আইডি থেকে এসব অডিও-ভিডিও পোস্ট করা হয় সেগুলো বন্ধেও কর্তৃপক্ষকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ভিডিওর বিষয়ে রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ভিডিওটি এআই দিয়ে এডিট করা হয়েছে। আমাকে হেনস্তা করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একটি পক্ষ এসব করেছে। ন্যাচারালি এর শাস্তি তারা পাবে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
এই বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। বিভিন্ন ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে প্রশাসনের সকলের বিরুদ্ধে বিভিন্নরকম উল্টাপাল্টা পোস্ট করা হয়। এসব নেগেটিভ কাজকর্ম যারা করে তাদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। এসব উড়ো জিনিসের উপর ভিত্তি করে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। কারও কাছে যদি শক্তিশালী প্রমাণ থাকে তাহলে সরাসরি সেটা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবি/এইচএন