রাজধানীর প্রবেশপথ বৃহত্তর উত্তরা মডেলটাউন পুরো এলাকা রয়েছে ছিনতাইকারীদের দখলে। ছিনতাইকারীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এ এলাকাবাসী।
সাম্প্রতিক সময়ে, উত্তরায় ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ছিনতাইকারী সন্দেহে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয় দুজনকে। উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকার বিএনএস সেন্টারের সামনে ফুটওভারব্রিজের উপরে দুই যুবক বকুল (৩০) ও নাদিমকে (৪০) ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ওই দুই যুবককে ছিনতাইকারী সন্দেহে স্থানীয় জনতা ফুটওভার ব্রিজে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাদের প্রথমে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে নিয়ে আসা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে উত্তরায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে রাজধানীবাসীর মধ্যে। ছিনতাইকারীদের বেপরোয়া আচরণে প্রায়ই গুরুতর আহত এমনকি প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সড়ক ও অলিগলিতে নির্বিঘ্নে চলতে ভয় পাচ্ছেন মানুষ।
এদিকে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারো কারো বক্তব্যে কিছু কারণ সামনে আসছে। সূত্র বলছে, রাজধানীর থানাগুলোতে যেসব কর্মকর্তা (ওসি, এসআই, এএসআই) বর্তমানে কর্মরত আছেন, তাদের প্রায় সবাই নতুন। তারা ঢাকার অলিগলি চেনেন না। আবার এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের নিয়েও তেমন কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। ফলে অপরাধী শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে।
সূত্র আরো বলছে, প্রশাসনের অব্যাহত অভিযানে একদিকে গ্রেপ্তার হচ্ছে, অন্যদিকে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে আবারো একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধীরা। অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারী চক্রের হাতে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির পাশাপাশি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিনিয়ত ভয় ও আতঙ্কে বিঘ্নিত হচ্ছে এখানকার মানুষের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম। পরিবারের সদস্য ও স্কুল-কলেজে পড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে।
উত্তরার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ভয় এবং আতঙ্কের কারণে বিকালের পরপরই আমাদের বাসায় ঢুকে যেতে হয়। কোথাও ছেলে-মেয়ে ও পরিবার নিয়ে বের হওয়া যায় না। কখন কী ঘটে যায় বলা যায় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবকিছু ঘটার পরে আসে; তাই তাদের ওপর ভরসা করা যাচ্ছে না।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের একজন পুলিশ পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘থানায় এখনো পুলিশ সদস্য ও অফিসারের ঘাটতি আছে। ক্ষেত্রবিশেষে দুজন কনস্টেবল ও একজন এসআই বা এএসআই দিয়ে ডিউটি করাতে হচ্ছে। তাদের অনেকে আবার রাজধানীতে নতুন। তাই অপরাধী শনাক্ত বা তাদের ধরতে পারছে না পুলিশ। তা ছাড়া রাতে ও ভোরে সড়কে পুলিশের কম উপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।’
সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর মহাসড়ক কাওলা, জসিম উদ্দিন, আজমপুর, উত্তরা হাইস্কুল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, দিয়াবাড়ী ১৮ নম্বর সেক্টর, আব্দুল্লাহপুর চৌরাস্তা, আইসি হাসপাতাল ঘাট রেললাইন ও কামারপারা এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের উৎপাতে রাতের বেলায় সড়ক ভয়ংকর হয়ে উঠে।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। উপর মহল থেকেও আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ছিনতাইকারী, ডাকাতি, চুরি ঠেকাতে। আমরা তল্লাশি ও অভিযান চালাচ্ছি উত্তরার বিভিন্ন জায়গায়। সন্ধ্যার পরপরই ঘটনাগুলো ঘটে। উত্তরায় সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করছি।
আমারবাঙলা/এমআরইউ