নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সানারপাড় এলাকায় পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা না দেওয়ায় ১০৫ শতাংশ জমির উপরে অবস্থিত কারখানার অংশীদার দাবী করছে দুর্বৃত্তরা। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে এই চক্রের প্রধান লিয়াকত আলী ফ্যাক্টরির মালিক মো. হেলাল, পেয়ার আলী, নুরুল ইসলাম, মেজবাহ ইসলাম আরিফ, ফখরুল ইসলাম মজুমদার, মহাসিনা আক্তার হ্যাপি ও মাহমুদা আক্তার সুলতানা গংদের কাছে এই চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু তারা টাকা না দেওয়ায় শুরু করেন নানা ধরনের নির্যাতন। এই ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হলে দুর্বৃত্ত লিয়াকত আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু কিছুদিন পরে জামিনে এসে হেলালসহ ভুক্তভোগিদের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় এরপর একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগিরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. হেলাল বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে সানারপাড়ের খর্দ্দঘোষপাড়া মৌজায় সিএস ১৮৪/৪০৪, আর এস ৪৭৪/৪৭৫ এসএ ১৩২ নম্বর এবং সিএস খতিয়ান ১১৭; মোট ১০৫ শতাংশ জমির মালিক হন তারা। সেখানে পাইপের কারখানা ও কাঠের স’মিলসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী করে ভোগ-দখল করে আসছিলেন। ২০২১ সালে হঠাৎ করে লিয়াকত আলী তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হেলালসহ ভুক্তভোগিদের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবী করেন। টাকা না দিলে ওই জমির অংশীদারিত্ব চান। কোনোটা না দেওয়ায় লিয়াকত আলী নানাভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন ভুক্তভোগিদের। এক পর্যায়ে ভুয়া দলিল দেখিয়ে কারখানা দখলের চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ লিয়াকতকে গ্রেপ্তার করে। কিছুদিন পর জামিনে বের হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে হেলালসহ সবার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করতে থাকেন।
লিখিত বক্তব্যে হেলাল বলেন, এই ঘটনা সিআইডি, পিবিআই গত কয়েক বছরে একাধিকবার তদন্ত করেছে। প্রতিবার তদন্ত রিপোর্ট লিয়াকতের বিরুদ্ধে দিয়েছে। তারপরও হয়রানী বন্ধ করছেন না তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে হেলাল জানান, লিয়াকত আলী (৫৫) সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি সাহেবপাড়ার হোসেন আলীর ছেলে। তিনি এলাকায় প্রতারক এবং ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তার কারোর জমিও ওপর নজর পড়লে জাল দলিল তৈরি করে ফেলেন। জাল দলিল তৈরিতে তিনি বিশেষ পারদর্শী। এ বিষয়ে তিনি অর্থের বিনিময়ে ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট অনেকের সাহায্য নেন।
হেলাল আরো বলেন, যে জমির অংশীদারিত্ব চাচ্ছেন লিয়াকত তা আমরা ৪০ বছর ধরে ভোগ-দখল করে আসছি। এখন কারখানা করে তা ভাড়া দেওয়া আছে। এই জমির আরএস মোতাবেক নামজারী খাজনা বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিশোধ করা আছে।
তিনি জানান, লিয়াকত আলীকে সার্বক্ষণিক সাহায্য করছেন তার ছেলে নুর মোহাম্মদ নাঈম (২৫) ও সোনারগাঁ কাঁচপুর উত্তরপাড়ার মৃত আক্কাস আলীর ছেলে শাহ আলম মোল্লা (৬০)।
হেলাল আরো জানান, লিয়াকতের জাল দলিল তৈরির বিষয়টি সহজ চোখে ধরা পড়ে। অনেক আগের করা দলিল হিসেবে তিনি যেটি ম্যাজিস্ট্যার্ট কোর্টে উপস্থাপন করেন; তাতে দাতা ও স্বাক্ষীর স্বাক্ষর বলপয়েন্টে করা। অথচ আনেক আগে দাতা, স্বাক্ষীরা খুব বেশি স্বাক্ষর করতে পারতেন না। বেশিরভাগই টিপসহি দিতেন। আরো বিষয়, স্বাক্ষর পারলেও ওই সময় ফাউন্টেনপেন ছিল। দলিলের স্বাক্ষর সময় বিবেচনায় ফাউন্টেনপেনে থাকার কথা।
তিনি বলেন, এদিকে সব বিবেচনায় দলিলটি নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে মামলা হয়। এই মামলা ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। পরে লিয়াকত আলীর নামে ওয়ারেন্ট জারী হয়। তারপরে গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন লিয়াকত। পরে নয়দিন পরে হাজত থেকে জামিনে বের হন।
হেলাল বলেন, লিয়াকত আজ পর্যন্ত আমাদের যে জায়গা তার বলে দাবি করেছেন, সেই দলিলের কোনো নকল প্রদর্শন করতে পারেননি। তিনি ও তার ছেলে সদলবলে আমাদের জায়গায় এসে মাদক সেবন করেন এবং কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
সর্বশেষ তিনিসহ ভুক্তভোগী সবার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে হেলাল এ ব্যাপারে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ