সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে গুমের ঘটনায় এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং ট্রাইব্যুনালের সদস্য মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। যথার্থ ও কার্যকর তদন্তের স্বার্থে আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন তারা। পাশাপাশি মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) গ্রেপ্তারের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুমের ঘটনায় আজ সোমবার ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে আসামীদের গ্রেপ্তারের আবেদন করে প্রসিকিউশন। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার করে ১২ ফেব্রুয়ারি হাজির করতে বলা হয়েছে।
এদিন শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম সংঘটিত হয়েছে। গুমের জন্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি হিসেবে তুলে ধরা হয়। যাদের গুম অবস্থা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেটিও শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। একজন ব্যক্তির ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য এসব গুম সংঘটিত হয়েছে।
গ্রেপ্তার ও তদন্তের স্বার্থে শুনানিতে সবার নাম প্রকাশ করেননি চিফ প্রসিকিউটর। তবে শেখ হাসিনাসহ চার আসামির নাম প্রকাশ করেন। অন্য তিন আসামি হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান। এর মধ্যে জিয়াউল আহসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার আছেন।
জাতিসংঘ মিশনে পাঠানো, পদোন্নতির লোভে বিভিন্ন বাহিনীর কিছু লোক গুমের মতো অপরাধে লিপ্ত হন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হলো। প্রথম মামলায়ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই পরোয়ানার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগ শাসনামলের গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হলো। এর আগের দুটি মামলায় একজন করে আসামি করা হয়েছে। গুমের আগের দুটি মামলায় একটিতে রাঙামাটির পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুলের সাবেক পুলিশ সুপার মো.মহিউদ্দিন ফারুকীকে এবং আরেকটিতে বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.আলেপ উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে।
আজকের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ।
মায়ের ডাক সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলামসহ গুম হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ