খুলনা জেলার আলোচিত ভূমিদস্যু সালাম খান তার প্রভাব বিস্তার ও অপকর্মের জন্য আবারও সংবাদ শিরোনামে। শেখ পরিবারের নাম ভাঙিয়ে এবং বিগত শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে জমি দখল, সরকারি সম্পত্তি অধিকরণসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সালাম খান বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিভিন্ন সাধারণ মানুষের জমি দখল করেছেন। এ ছাড়া সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করে তার নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। শেখ পরিবারের নাম ভাঙিয়ে বহু সুবিধা আদায় করেছেন এবং অন্যায় কাজগুলো নির্ভয়ে চালিয়ে গেছেন।
৫ আগস্টের পর থেকে সালাম খান তার কৌশল পরিবর্তন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে অন্তবর্তী ইউনূস সরকারের অধীনে তার দখলকৃত সম্পত্তি রক্ষার জন্য তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি তার অবৈধ সম্পদকে বৈধতা দিতে নানাভাবে প্রশাসনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, সালাম খান সাবেক সরকারের সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জমি দখল এবং অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তিনি নতুন সরকারে নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “যত দিন এই ধরনের ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য চলবে, তত দিন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না।”
বিভিন্ন ভুক্তভোগী বর্তমানে প্রশাসনের কাছে তার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আবেদন করেছেন। বটিয়াঘাটা ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, সালাম খানের অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমরা সন্ধ্যা রানীর কাছ থেকে জমি ক্রয় করি। তিনি বলেন, খুলনার বটিয়াঘাটার অন্তরায় কৃঞ্চনগর মৌজার সি এস- ১৬১ নং খতিয়ান হইতে এস.এ-২০৩ খতিয়ানে ৫২৩ দাগ হইতে বর্তমান জরিপে বি আর এস-১৬৯ খতিয়ানে ১১০১ নং দাগে বিলান ৪.৬৭ একর জমির মধ্যে ০.০৯৯০ একর নালিশি জমি। উক্ত দাগ বা খতিয়ানের জায়গাটি ২০১০ সালে সন্ধ্যা রানী রায় ক্রয় করার পরে জায়গাটিতে চতুর্দিকে পাচিলসহ ভিতরে আধা-পাকা টিনসেট বিল্ডিং তৈরি করেন এবং জায়গাতে নিয়মিত যাওয়া আসা করেন। তবে উনার পরিবার আমেরিকাতে বসবাস করার সুবাদে তিনি যাওয়া আসার ভিতর থাকতেন। সেই সুবাদে খালি জায়গা পেয়ে এই সালাম খান জায়গাটি দখল করেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখাতে থাকেন। যখন তারা দেশে থাকতেন তখন তার মেয়ে এবং সে কোথায় যাচ্ছে তা ফোন দিয়ে ভয় দেখাতো এই সালাম খান ও তার গুন্ডরা। এক পর্ষায়ে বিভিন্ন জায়গায় বসাবসির চেষ্টা করলেও তিনি আসতেন না! তার নিকট কোন ডকুমেন্টস নেই। পরবর্তীতে সালাম খান জমির পূর্বের মালিককে দিয়ে ভুয়া একটা দলিল তৈরি করতে পারে এমনটা জেনেছি... যেটা সম্পূর্ন জাল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, জায়গাটিতে সন্ধ্যা রাণী রায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন কিন্তু উনি দেশের বাহিরে থাকার সুবাদে খালি পড়ে থাকা জায়গাটি দখল করেন ভূমিদস্যু এই সালাম খান। তার সর্বোচ্চ সাজা দাবি করছি, জমি দখল সহ তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো এবং আওয়ামী লীগ এর প্রভাব খাটিয়ে এমন কাজ করার জন্য।
গিয়াস উদ্দিন আরও জানান, ভূমিদস্যু সালাম খান তার প্রভাব এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। বর্তমান অন্তবর্তী ইউনুস সরকারের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এমন ভূমিদস্যুদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালাম খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ সম্পর্কে কোনো কিছু বলতে নারাজ বলে জানান।