অপরাধ

মৃত্যুর আগে বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার দেখে যেতে চান বাবা-মা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের মশুরা এলাকার অনন্ত দাস ও কল্পনা দাসের ছোট ছেলে বিশ্বজিৎ দাস। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে শিবির সন্দেহে ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎ দাসকে।

এই ঘটনায় নাম ওঠে আসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মীর নূরে আলম লিমন, শাকিলসহ বেশ কয়েকজনের। যারা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করার পরে ঢাকার দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে রায়ে ২১ আসামির মধ্যে আট জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে ছয় জনেরেই সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। আর দুই জনের ফাঁসির আদেশ হয়; যা কার্যকর হয়নি দীর্ঘ ১২ বছরে।

এ হত্যার বিচার পুরোপুরি দেখতে পারেননি বিশ্বজিতের বাবা-মা। এ নিয়ে তাদের মাঝে হতাশা কাজ করে। মশুরায় বিশ্বজিতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতর টানানো রয়েছে বিশ্বজিৎ দাসের অনেক ছবি। ছবির মতোই মানুষটাও এখন শুধুই স্মৃতি। ছেলে আর বাড়ি ফিরবে না। ছেলের জন্য দীর্ঘ এক যুগ ধরে নীরবে চোখের জল ফেলে চলছেন মা কল্পনা দাস।

সেদিন শত শত মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আর সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো তাকে।

পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই ভীষণ শান্ত স্বভাবের ছিলো বিশ্বজিৎ। আর্থিক অবস্থা ততোটা ভালো না হওয়ায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছোটবেলা থেকে ঢাকার শাঁখারী বাজার এলাকায় ভাইয়ের দোকানে দর্জির কাজ শিখেছিলেন। এরপর ভাইয়ের পাশাপাশি নিজেও ধরেছিলেন সংসারের হাল। অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকলেও মা-বাবাকে দেখতে প্রায়ই বাড়ি আসতেন।

কল্পনা দাস বলেন, আমার বিশ্ব (বিশ্বজিৎ) তো কখনো রাজনীতি করেনি। আমার ছেলে কাজ করে সংসার চালাতো। ছেলেকে জগন্নাথের ছাত্রলীগের পোলাপাইন মেরে ফেললো। আজ ১২ বছর হয়ে গেলো অপরাধীদের বিচার হলো না। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমরা বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত। আমি আমার বিশ্ব হত্যার বিচার চাই।

বিশ্বজিৎ দাসের বাবা অনন্ত দাস বলেন, ছেলে আমাদের ভরণপোষণ দিতো। ছেলেকে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আজ ১২ বছর ধরে এখনো বিচার পেলাম না। এই সরকারের আমলে আমার ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। তাহলে মরে গেলো অন্তত আত্মা শান্তি পাবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুরের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা হয়েছে। প্রকাশ্যে তাকে কারা হত্যা করেছে তা আমরা জানি। তারা আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ ধরে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে বিশ্বজিতের পরিবার। আমরা চাই অতি দ্রুত সব অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঝিনাইদহে মেছো বাঘকে পিটিয়ে হত্যা

ঝিনাইদহের শৈলকুপার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের খন্দকবাড়িয়া...

আন্দোলনে ‘নিহত’ ব্যক্তি থানায় হাজির

স্বামী আলামিন গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোল...

বইমেলা এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হচ্ছে না 

আগামী ২০২৫ সালের অমর একুশে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্...

ভাইরাল কন্যা সিঁথি আসিফ আকবরের গানের মডেল

কোটা আন্দোলনের সময় রাজপথে সাহসি কিংবা ব্যতিক্রম ভূ...

ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে

দেশের গণতন্ত্রের ভীতকে শক্তিশালী করার জন্য যৌক্তিক...

‘বাজিগর টু’ আসছে, নায়ক হিসেবে শাহরুখকে চান প্রযোজক

বলিউডের সেরা পরিচালক জুটি আব্বাস-মাস্তান পরিচালিত ‘বাজিগর’ হিন্দি...

সেতুটি ভেঙে অব্যবহৃত পড়ে আছে ৭ বছর হলো

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে...

জেনেভা মিশনের শ্রম কাউন্সেলরকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে আইন, বিচার ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ...

গভীর রাতে পঙ্গুর সামনের সড়কে গেলেন চার উপদেষ্টা, হাসপাতালে ফিরলেন আহতরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রাজধানীর জাতীয় অর্...

‘থ্রি জিরো’ ধারণা কী?

অনেকদিন ধরেই নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ ধার...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা