ছবি: সংগৃহীত
অপরাধ

ফরেস্টার শ্যামা বাবুর দুর্নীতির কারণে পশ্চিম সুন্দরবন কাঁদছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্যামা প্রসাদ রায়, নামটি পশ্চিমবন বিভাগের সুন্দরবন ও ফরেস্ট বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে আতঙ্কের নাম। শুধু আতঙ্ক নয় ,যে সুন্দরবন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের প্রাণ রক্ষা করছে, অথচ আজ পশ্চিম সুন্দরবন এক শ্যামা প্রসাদ রায় এর কারণে নীরবে কাঁদছে। শ্যামাপ্রসাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। সাবেক বন কর্মকর্তা ও জেলেদের মধ্যে থেকে দেওয়া হয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। ফরেস্ট কর্মকর্তা হয়েও বনে গিয়েছিলেন ঠিকাদার।

খুলনার সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন এর দুর্নীতি- ঘুষ লেনদেন সহ নানা অপকর্মের সাক্ষী শ্যামা প্রসাদ রায়। যার ক্ষমতা বলে এতদিন পশ্চিম সুন্দরবনে নিজে নানা অপকর্ম করে কোন প্রকার শাস্তি ভোগ করেননি। অথচ সেই ডিএফও দীর্ঘ চার বছর পর ৫ই আগস্টের পর বদলি করা হয় তাকে। শুধু ডিএফও নয় খুলনার উচ্চপদস্থ অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীকে বদলি করা হলেও অজানা কারণে পশ্চিমবন বিভাগে এখনো একটানা ২৩ বছর অবস্থান করছেন শ্যামা প্রসাদ রায়। শুধু তাই নয় শ্যামাপ্রসাদ রায় নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য খোদ ফরেস্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জেলে বাউলীতে দিয়ে মামলা করান।

সম্প্রতি ফরেস্টের পশ্চিম বন বিভাগে অবৈধ হরিণ শিকার, অভয়ারণ্যে মাছ ধরা, গাছ কাটা সহ বিভিন্ন বিষয়ের সুন্দরবনকে নিরাপদ রাখতে কঠিন অবস্থান নেওয়ায় সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে হরিণের মাংস ও অবৈধ জেলেদের ধরে শাস্তির আওতায় আনা হয়। অথচ যাদেরকে শাস্তির আওতায় এনেছিল বন বিভাগ, সেই সকল অপরাধীদের উস্কানি দিয়ে ফরেস্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করান শ্যামাপ্রসাদ রায়। এ নিয়ে ফরেস্ট পশ্চিম বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

শ্যামাপ্রসাদ রায় এর অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে খুলনার স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হল হলেও কোন সুফল মেলেনি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম আর অপকর্মের কারণে হয়েছে একাধিক মামলা। অভিযোগ দেওয়া হয়েছে ফরেস্টের বিভিন্ন দপ্তরে। সর্বশেষ গত ৮ ই সেপ্টেম্বর শাহাবুদ্দিন শাম নামের এক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দেওয়া হয় । এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ফরেস্টের সাবেক ৬ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন অধিদপ্তরসহ ৬টি দপ্তরে এ অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করেন।

একজন ফরেস্ট কর্মকর্তা হয়েও খুলনা রিভারভিউ পার্ক (সাবেক নাম শেখ রাসেল ইকোপার্ক) এর গাছ লাগানোর টেন্ডার নিয়ে তিনি বাহিরের লেবার না খাটিয়ে ফরেস্ট কর্মচারী দের দিয়ে গাছ লাগিয়েছেন। চারার পরিবর্তে বীজ বপন করে । যতটা গভীরে মাটি খুঁটে খুঁড়ে গাছ লাগানোর কথা ছিল তা সঠিকভাবে প্রয়োগ না করায় গাছগুলো এখন নষ্ট হচ্ছে। এখান থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শ্যামা প্রসাদ রায়।

এর আগে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে বিষ দিয়ে মাছ শিকারে সহায়তা, বোর্ড লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) নবায়ন ও অনুমতিপত্র দিতে কয়েকগুণ বেশি অর্থ গ্রহণ, জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মারধরসহ বিতর্কিত নানা অভিযোগ রয়েছে। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সভায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বন বিভাগ। ফলে স্থানীয়দের পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে সুন্দরবন।

স্থানীয়রা জানান, কয়রার বন আদালতের বিচারক শ্যামাকে সতর্ক করেছিলেন। তাই শ্যামা ক্ষিপ্ত হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ৭০ মামলা কয়রার বন আদালত থেকে পাইকগাছা বন আদালতে নিয়ে গেছেন।

২০১৯ সালের অক্টোবরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস নামে এক জেলে। তাতে নীল কমল এলাকায় অভয়ারণ্য মাছ শিকারে অতিরিক্ত ঘুষ আদায় ও জেলেদের মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে।

ওই বছরের একই মাসে কয়রার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালে কালাবগি ফরেস্ট স্টেশনে কর্মরত থাকার সময়ে তার বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেছিলেন জেলেরা।

এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে পাটকোস্টা ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, ‘আমি ভালো কাজ করি বলেই আমার সমালোচনা হয়। এতে আমার কিছু আসে যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফরেস্ট কর্মচারী বলেন, আমাদের দিয়ে শেখ রাসেল ইকো পার্কের কাজ করিয়েছেন শ্যামাপ্রসাদ রায় অথচ তিনি এ সকল কাজ নিজে নামে বেনামে টেন্ডার নিয়ে করেছেন। আমাদের তো আর ফরেস্ট অফিস কারোর ব্যক্তি অর্থ উপার্জনের জন্য রাখেনি ,কিন্তু আমরা যেহেতু চাকরি করি বাধ্য হয়ে আমাদের বসের কথা শুনতে হয়।

ফরেস্টের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এই ব্যক্তিটাকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি ভাই ,কিন্তু বলার আর কিছু করার নেই। তার ক্ষমতার উৎস যে কোথায় তা এত বছরের চাকরি জীবনেও খুঁজে পেলাম না। আমাদের সকলেরই বদলি হয় কিন্তু তার বদলি হয় না। বিভিন্ন মহল দিয়ে মামলা হামলা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সুন্দর একটি পরিবারকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমবন বিভাগ একজন ব্যক্তির জন্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে এর থেকে মুক্তি কোথায়, আমরা নিজেরাও জানিনা ভাই।

এ বিষয়ে সিএফ মিহির কুমার দো বলেন, যদি কারোর বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দীর্ঘদিন এক পদে থাকা এসব বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি দ্রুত ইং এর সমাধান হবে।তবে চাকরির ক্ষেত্রে একজন আর একজনকে দমিয়ে রাখতে যদি কোন হয়রানি মূলক মামলা বা অপতৎপরতা চালায় আমরা প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আমার বাঙলা/ এসএ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নওগাঁয় গাছের হাট নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ঔদ্ধত্যতা

নওগাঁয় সপ্তাহের প্রতি বুধবার বসা গাছের হাটের জায়গা...

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে নেই কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা লক্ষাধিক রোহিঙ্গা...

আইপিএলে ১৩ ক্রিকেটারের নাম পাঠালো বিসিবি

পরবর্তী আরও তিনটি মৌসুমের আইপিএলের জন্য ১৩ ক্রিকেট...

নাগরিক সেবা পেতে চরম দুর্ভোগে রাজধানীরবাসী

নাগরিক সেবা পেতে চরম দুর্ভোগে রাজধানীর দুই সিটি ক...

পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন চলাচল শুরু ২ ডিসেম্বর

পদ্মাসেতু হয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-যশোর-খুলনা-বেনা...

দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ চান আগামী এক বছরের মধ্যে নির্বাচন হোক

দেশের ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ আগামী এক বছরের মধ্যে...

লেবাননে এক দিনে নিহত ৫৯

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দক্ষিণ লেবানন জুড়ে হামলা...

ঝিনাইদহে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ...

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু 

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার...

রাজবাড়ীর জান্নাতুল দুই স্বামীকে ম্যানেজ করেই চলেছেন!

চলচ্চিত্র বা গল্প-উপন্যাসে চরম ক্লাইমেক্স কিংবা থ্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা