নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় আর্থিক লেনদেনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান এ আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে এ কথা উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আবেদনে বলা হয়, বহুল আলোচিত এমপি আনার অপহরণ মামলার অন্যতম আসামি শিমুল ভুঁইয়া আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে আসামি সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতার কথা রয়েছে। জবানবন্দিতে ভিকটিমকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ তথা হত্যা সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে মিন্টুর আর্থিক লেনদেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে থাকা আসামি কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু মিন্টুর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
শিমুল ভুঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, গত ৫/৬ মে এমপি আনারকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন সাইদুল করিম মিন্টুর সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে কথা বলেন। এ সময় দুজনের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের কথা হয়।
রিমান্ডে গ্যাস বাবু আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের পরে ঘাতক দলের প্রধান শিমুল ভুঁইয়ার সাথে সে প্রতিশ্রুত টাকা লেনদেনের বিষয়ে ডিজিটালি এবং ফিজিক্যালি বিস্তারিত আলোচনা করেছে এবং অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রমাণস্বরূপ ছবি আদান প্রদান করেছে।
গত ২৩ মে মিন্টুর কাছ থেকে পাওয়া শিমুল ভুঁইয়ার দাবি করা টাকার আংশিক তার মাধ্যমে ঘাতক শিমুল ভুঁইয়াকে দেওয়ার কথা ছিল। এসব তথ্যের ভিত্তিতে গত ১২ জুন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মহানগরস্থ ধানমন্ডি থানাধীন জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল এলাকা থেকে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে তিনটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা উদঘাটন এবং অজ্ঞাতনামা পরিকল্পনাকারীদের সনাক্তকরণ, গ্রেপ্তার, সঠিক নাম ঠিকানা সংগ্রহের জন্য মিন্টুর ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিন বেলা ২টার দিকে মিন্টুকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা তিনটার দিকে ডিবি পুলিশের গাড়িতে তাকে আদালতে আনা হয়। পরে তাকে এজলাসে তোলা হয়। এ সময় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট এবং তার মাথায় হেলমেট ছিল। আদালতে স্বজনরা তাকে ঘিরে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মিন্টুকেও কাঁদতে দেখা যায়।
বেলা ৩টা ৬ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আদালত তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য শোনেন। এরপর রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু। তিনি বলেন, মামলার তদন্তে অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ডিবি পুলিশ তাকে ১২ জুন গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। কিন্তু জানলাম তাকে ১১ জুন তিনটায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এখানে ডিবি পুলিশ আইনের যথাযথ প্রয়োগ করেনি। তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে এ মামলায় সম্পৃক্ত করে হয়রানী করা হচ্ছে।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এবি/এইচএন