জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক ছাত্র মো. সাইফুল ইসলাম লিখনকে অপহরণের আড়াই মাসেও সন্ধান মেলেনি। সন্তানকে ফিরে পেতে আহাজারি করছেন তার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখনের সন্ধান চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিখোঁজ লিখনের বাবা দুলাল হাওলাদার, মা রোজিনা বেগম, ভাই বাবু হাওলাদার, বোন মিতু আক্তার ও ফাতেমা বেগম।
লিখিত বক্তব্যে বাবু হাওলাদার বলেন, আমার ভাই সাইফুল ইসলাম লিখন (৩৩) প্রায় আড়াই মাস ধরে নিখোঁজ। বাবা-মা ছেলে হারানোর শোকে পাগলপ্রায়। দীর্ঘ এই সময়টিতে আমাদের পরিবারে সুখ কী জিনিস তা হারিয়ে গেছে। ঢাকার ওয়ারির চণ্ডীচরণ বোস স্ট্রিটে আমাদের বসবাস। স্থায়ী ঠিকানা মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি।
তিনি বলেন, ভাই সাইফুল ইসলাম লিখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। তাকে ব্যবসায়িক টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছি আমরা। জিডি ও অপহরণ মামলা করার ক্ষেত্রে আমরা মুন্সীগঞ্জ পুলিশের অসহযোগিতা পেয়েছি। এমনকি নানা ঘটনায় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমার ভাইয়ের অপহরণের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা এবং প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা লিখন পরিকল্পিতভাবে পরিচিত বন্ধুদের কাছে মুন্সিগঞ্জ সদরে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় অপহরণের মামলা দায়ের হয়েছে। এর আগে পুলিশ নানা অসহযোগিতা করেছে আমাদের। মামলার আগে জিডি করা এবং মামলায় প্রকৃত আসামির নাম সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশ আমাদের হেনস্তা করেছে।
লিখন নিখোঁজের ঘটনা বর্ননা করে তিনি জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি লিখন মাকে জানান, মুন্সিগঞ্জ যাবেন, বন্ধু সাদ্দাম তাকে দাওয়াত দিয়েছেন। দুপুরে একটি জন্মদিন, রাতে একটি মুসলমানির অনুষ্ঠানও আছে। লিখন আরো জানান, আসার সময় সাদ্দামের সঙ্গে ব্যবসায়িক হিসাব করে আসবেন। ওই দিন আনুমানিক বেলা ১১টায় মুন্সিগঞ্জ যাবেন বলে ওয়ারির বাসা থেকে বের হন।
তিনি বলেন, আমি লিখনকে রাত ১১টা ১৪ মিনিটে ফোন করি তিনি বাসায় আসবেন কিনা জানার জন্য। কিন্তু তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাই এবং তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল দিতে যেয়ে দেখি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিএক্টিভেটেড। এসময় আমি সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তিনি জানান, লিখন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন।
বাবু বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি পরিবারের সদস্যসহ আমরা সাদ্দামের দেওয়া ঠিকানামতো মুন্সিগঞ্জ সদরে স্বপ্ন সুপার শপের বিল্ডিং-এর নিচে যাই। সাদ্দামের সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানান, দাওয়াত খেয়ে ঘোরাঘুরি করে একটি ফোন আসায় লিখন চলে গেছেন। আমরা ওখানে লিখনের বিষয়ে নানা জনের কাছে খোঁজ নেই। এক সময় সাদ্দাম বলেন, আপনারা থানায় আসেন। আমরা থানায় গিয়ে দেখি সাদ্দাম একজন সাব ইন্সপেক্টরের সঙ্গে কথা বলছেন। তার নাম সাদ্দাম মোল্লা। তখন আমি এসআই সাদ্দামের সঙ্গে কথা বলি এবং জানতে চেষ্টা করি আমার ভাই লিখনের মোবাইল ফোন কোথায় বন্ধ হয়েছে। তখন এসআই সাদ্দাম আমাকে জানান লিখনের মোবাইল ফোন রাত ১১টা ২ মিনিটে মুন্সিগঞ্জ সদরেই বন্ধ হয়েছে।
বাবু আরো বলেন, এব্যাপারে তারা মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে চান। কিন্তু এসআই সাদ্দাম মোল্লা তাদেরকে বলেন মুন্সিগঞ্জ থানায় জিডি করা যাবে না। পরে নানা ঝামেলা পেরিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ৪৬১) করি। জিডি করার পর আমরা থানার ওসি, ওসি-তদন্ত, এসপিকে বিষয়টি অবগত করি। পাশাপাশি অভিযোগটি মুন্সিগঞ্জ সদর আর্মি ক্যাম্প, র্যাব-১১, র্যাব-১০ কেও বিষয়টি জানাই। জিডি তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে এসআই মকসুদুলকে দেওয়া হলেও পরে তাকে সরিয়ে এসআই সাদ্দাম মোল্লাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি ঘটনাস্থল আরকে টাওয়ারের বিল্ডিংয়ে স্বপ্ন সুপার শপের সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখি ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ৪০ থেকে ৮টা ২ মিনিট পর্যন্ত স্বপ্নের গেটের সামনে লিখন ছিলেন। ওই সময় লিখন বন্ধু আশরাফুল ইসলাম স্বাগতমের মা এবং তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে লিখনের বন্ধুর মেয়েকে ওখান থেকে কিছু কেনাকাটা করে লিখনের বন্ধু আশরাফুল ইসলাম স্বাগতম বাসায় যাওয়ার যে গেট আছে সে গেটের সামনে গেলে তাকে আর সিসি ক্যামেরাতে দেখা যায় না। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ঘটনার পরের দিন সকাল আনুমানিক ১০টা থেকে ১১টার ভিতরে পুরো পরিবার নিয়ে বাড়ি তালা দিয়ে আশরাফুল লাপাত্তা হয়ে যান। আশরাফুল ও তার পরিবারের অন্য অনেক সদস্যের মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।
এঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি অপহরণ মামলা (নম্বর-১৭) দায়ের করেন তারা। তিনি অভিযোগ করেন, এসআই সাদ্দাম মোল্লা নিজের মতো করে একটি অভিযোগপত্র লিখেন এবং আমার বাবার স্বাক্ষর নেন।
এদিকে লিখনকে মুন্সীগঞ্জের সাদ্দাম হোসেন সম্রাট, ইলিয়াস, রবিন, তপু, তানভীর, রাজীব, দেওয়ান গংরা অপহরণ করেছে বলে ধারণা পরিবারের।
আমারবাঙলা/এমআরইউ