খুলনা, গাজীপুর ও সিলেটে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ৪৯ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক ও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোমবার ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় মিছিল ও সমাবেশ হয়। এসব কর্মসূচি থেকে কয়েকটি জেলায় কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটাসহ এক ডজনের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ও বেআইনি ঘটনায় পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই সব ঘটনায় জড়িত অন্তত ৪৯ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলমান এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
খুলনায় কেএফসি, ডোমিনোজ পিৎজা ও বাটা শোরুম ভাঙচুর–লুটপাটের ঘটনায় ৩১ জনকে আটক করেছে সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ। রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গণমাধ্যম শাখার এডিসি আহসান হাবিব বলেন, খুলনা শহরে বাটা শোরুম ও কেএফসি ফুডকোর্টে লুটপাটের ঘটনায় পুলিশ ৩১ জনকে আটক করেছে। ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা নগরের ময়লাপোঁতা এলাকায় অবস্থিত কেএফসি ও ডোমিনোজ পিৎজা এবং শিববাড়ী এলাকায় অবস্থিত বাটা শোরুমে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। কেএফসি ও ডোমিনোজ পিৎজা রেস্টুরেন্ট একই ভবনে অবস্থিত। একই সময়ে শিববাড়ী মোড়ের টাইগার গার্ডেন হোটেলের নিচে থাকা বাটা শোরুমে ভাঙচুর করা হয়।
দুটি জায়গাই পড়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানার মধ্যে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। মিছিল অন্যদিকে ছিল, কিন্তু এখানে কারা হামলা করেছে, তা বলা যাচ্ছে না। ভাঙচুর করে হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যায়।
সিলেটে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামসুল হাবিব। তিনি জানান, থানায় আরো কয়েকজন আটক রয়েছেন। তাদের নাম-পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
পুলিশ জানায়, সোমবারের ঘটনায় বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখে ভাঙচুর ও লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার আসামিও রয়েছেন।
সোমবার সকাল থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সিলেট নগর বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল। বিকালের দিকে নগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা কেএফসি ভাঙচুর করে। এরপর বাটা, ইউনিমার্ট, আলপাইন রেস্তোরাঁসহ প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গাজীপুরে তিনটি রেস্টুরেন্ট ও বাটার শোরুমে হামলা, লুটপাটের ঘটনায় সোমবার রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় গাছা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোছাপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে সিয়াম খান (১৮), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নতুন বাজার বালিপাড়া গ্রামের মো. কামালের ছেলে শিমুল আহমেদ (২০), শরীয়তপুরের বহেরপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. শাহিন (১৯) ও গাজীপুর নগরের পূর্ব কলমেশ্বর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে জয়নাল আবেদীন (২১)। এ ঘটনায় গাছা থানায় মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুরে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল হয়। বোর্ডবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) গেট পর্যন্ত গিয়ে আবার বোর্ডবাজারে এসে শেষ হয়। এতে পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিল থেকে একপর্যায়ে বাটার শোরুম ও কয়েকটি রেস্তোরাঁয় হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা।
আমারবাঙলা/এমআরইউ