সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ব্যাংকের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ডের প্রায় ৩৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের (পুতুল) বিরুদ্ধে। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। সূচনা ফাউন্ডেশনের সিএসআর ফান্ডের টাকা দিতে বিএবি বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে একটি চিঠি দিয়েছিল। তদন্ত সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যে ২০টি ব্যাংক সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দিয়েছিল, সেই ব্যাংকগুলোর তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জনকল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ব্যাংকগুলো সিএসআর ফান্ড জমা করে। সেই টাকা জোর করে নিত সূচনা ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসনের দায়িত্বে ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ। তার বিরুদ্ধে গত ২০ মার্চ দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত কার্যালয়-১–এ একটি মামলা করেন।
দুদকের উপপরিচালক আখতার হোসেন বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা নিয়েছিল সূচনা ফাউন্ডেশন। ব্যাংকের সিএসআর ফান্ডের টাকা অপব্যয় ও আত্মসাতের অভিযোগে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও আসামি করা হয়েছে।
সূচনা ফাউন্ডেশনকে টাকার বিষয়ে একটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সূচনা ফাউন্ডেশনকে টাকা দিতে বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে তারা টাকা দিয়েছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সিএসআর ফান্ডের বেশির ভাগ অর্থ তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে ব্যয় করেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর তহবিলের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবায় ও ২০ শতাংশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন খাতে বিনিয়োগ করতে হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে সায়মাকে দুই বছরের জন্য সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান করা হয়। প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সহযোগিতার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছিল। পরে ২০১৭ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সায়মা ওয়াজেদকে বাংলাদেশ অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা নিরসনে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির কার্যাবলি সম্পাদনে সহায়ক ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সায়মা ওয়াজেদ সূচনা ফাউন্ডেশনের হর্তাকর্তা ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা দুদককে বলেন, সিআরএস ফান্ডের টাকা তারা জনকল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ব্যবহার করতেন। তবে ২০১৬ সাল থেকে এই ফান্ডের টাকা নেওয়া শুরু করে সূচনা ফাউন্ডেশন।
সূচনা ফাউন্ডেশনকে সিআরএস ফান্ড থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এফএসআইবিএল) ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। ব্যাংক দুটি দিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। বাকি ব্যাংকগুলো পাঁচ লাখ টাকা থেকে আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত দিয়েছে। সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দেওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংক।
দুদক সূত্র জানায়, সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বিএসএমএমইউ) শিক্ষকতার মিথ্যা দাবি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগের আবেদন করেছিলেন এবং পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
আমারবাঙলা/জিজি