কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে পানির সংকটে ভুগছেন হাজারো মানুষ। শুষ্ক মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পানি সংগ্রহের জন্য শুরু হয়েছে সংগ্রাম। বিশুদ্ধ পানির জন্য মাইলের পর মাইল পাড়ি দিতে হয় ছোট-বড় সবাইকে।
সরেজমিন উপজেলার সীমান্তবর্তী চন্দ্রডিঙা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছয় বছরের শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস মায়ের সঙ্গে পানি সংগ্রহে এসেছে। প্রতিদিন দু’বার মা শহর বানুর সঙ্গে পাহাড়ি ছড়ার পাশে খোঁড়া কুয়া থেকে পানি আনতে হয় তাকে। কারণ সরকারিভাবে স্থাপিত গভীর নলকূপগুলোর পানি আয়রনযুক্ত, যা খাওয়ার অনুপযোগী। ফলে বাধ্য হয়েই স্থানীয়দের ছড়া, খাল কিংবা কুয়ার পানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী রংছাতি, খারনৈ ও লেংগুরা ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রামে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ পানির কষ্টে ভুগছেন। এখানকার গারো, হাজং ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা মূলত পাহাড়ি ছড়ার পানির ওপর নির্ভরশীল। শুষ্ক মৌসুমে ছড়াগুলো শুকিয়ে গেলে গভীর নলকূপই ভরসা। কিন্তু এসব কূপ থেকে উত্তোলিত পানিতে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতি মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
চন্দ্রডিঙা গ্রামের গৃহিণী রীতা মারাক বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। গভীর নলকূপ থেকে প্রথমে পানি আনতাম; কিন্তু এখন সেখানে প্রচুর আয়রন। বাধ্য হয়ে নালার পানি খাই। শুকনো মৌসুমে পানির জন্য অনেক কষ্ট হয়।’
লেংগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ভূঁইয়া জানান, তার ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়ী, গোপালবাড়ী, ফুলবাড়ীসহ বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিগত সরকারের আমলে সীমান্তে গভীর নলকূপ বসানোর সময় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ফলে, এখনো মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
কলমাকান্দা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের ভাষ্য, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের স্তর থাকায় গভীর নলকূপ বসানো কঠিন। তবে সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি গভীর কূপ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু, ভূগর্ভস্থ স্তরে সমস্যা থাকায় সেখানে আয়রনের মাত্রা বেশি।
নেত্রকোনা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, কলমাকান্দার সীমান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সমস্যার সমাধান হবে।
আমারবাঙলা/জিজি