দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. আবেদ আলীকে ঘিরে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের বাড়িতে লজিং থেকে লেখাপড়া করেন আবেদ আলী। ২০০৭ সালে শফিকুল ইসলামের সুপারিশে শিক্ষা বোর্ডে মাস্টার রোলে পিয়ন হিসেবে চাকরি পান। ২০১০ সালে চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর ২০১৩ সালে সেকশন অফিসার থেকে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। এরপর থেকেই বোর্ডে নিজের প্রভাব বাড়াতে থাকেন আবেদ আলী।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন, যা অনুমোদন, স্বীকৃতি নবায়ন, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনুমোদন, টেন্ডার কমিশনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করত। সাধারণ কর্মচারী হিসেবে জীবন শুরু করা আবেদ এখন বিলাসবহুল বাড়ি, জমি, ইটভাটা, এবং গাড়ির মালিক। অভিযোগ রয়েছে, বোর্ডের ফান্ডের অর্থ লুটপাট, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে তিনি শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধানে তার এসব সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়ার পরও ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব হয়েছে।
আবেদ আলীর নামে বোর্ডের পাশেই দুটি ইটভাটা, পাহাড়পুর এলাকায় বিলাসবহুল ভবন, বিরল উপজেলার ৮ একর জমি ও তিন হাজার লিচু গাছের মালিকানা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পত্তি নিজের নামে না রেখে আত্মীয়দের নামে রেজিস্ট্রি করেছেন বলে জানা গেছে।
দুদক ২০১৬ সালে আবেদের বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত শুরু করে এবং তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পায়। দুদক মামলার একটি প্রতিবেদন ঢাকা হেড অফিসে প্রেরণ করে। তবে অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজার রহমান (ফিজার) এবং দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাকের কাছে তদবির করে আবেদ তার নাম তদন্তের তালিকা থেকে বাদ করিয়ে নেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং মামলা থেকে রেহাই পেতে আবেদ আলী খোলস পাল্টে বিএনপির আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আবেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেছেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে তার বিপুল সম্পদের উৎস এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা, অভিভাবক মহল এবং সচেতন নাগরিক সমাজ নতুন করে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন।
আমারবাঙলা/ইউকে