জয়পুরহাটের কালাইয়ে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই আতঙ্কে জীবন যাপন করছেন গ্রামে গ্রামে। একের পর এক সংঘটিত অপরাধের পরেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় গ্রামবাসীরা বাধ্য হয়ে নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই পালন করছেন।
গত ৭ মাসে এ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে রাতভর লাঠিসোঁটা, বাশি ও টর্চলাইট হাতে নিয়ে পর্যায়ক্রমে তারা পাহারা দিচ্ছেন। গভীর রাতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গিয়ে সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৭ মাসে কালাই উপজেলায় ধারাবাহিকভাবে হাট-বাজার, মসজিদ, হাসপাতাল, মহাসড়ক ও বিভিন্ন গ্রামে ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির মত ঘটনা ঘটে চলেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অধিকাংশ গ্রামেই স্থানীয়দের উদ্যোগে পাহারাদার কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রতিরাতে টিম লিডারের নেতৃর্ত্বে ৮/১০ জনের দল গ্রামের অলি-গলিসহ প্রবেশদ্বারে পাহারা দিয়ে আসছেন। গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চুরি ডাকাতি রোধে ছাত্র, যুবক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ পাহারার কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। সপ্তাহে প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজন পুরুষ সদস্যকে পাহারার দায়িত্বে থাকতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকার চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও এই কাজে যুক্ত রয়েছেন।
সড়াইল গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, ‘প্রতিরাতে পাহারা দেওয়ার জন্য ৮/১০ জন মিলে বেশকয়েক দলে ভাগ করা হয়েছে। গ্রামের প্রবেশদ্বারে, গুরুত্বপূর্ণ মোড়, অলি-গলি এমনকি সন্দেহজনক স্থানগুলোতে দলবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন অধিকাংশ গ্রামের লোকজন। অপরিচিত কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন মনে হলে তার নাম-ঠিকানা লিখে রাখা হচ্ছে। ওই গ্রামবাসীরা জানান, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে দিনে-রাতে ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
প্রকাশ্য টাকা ছিনতাই, সংঘবদ্ধ দলের ডাকাতি, গাছ কেটে মহাসড়কে বিভিন্ন যানবাহনে গণডাকাতি, গরু চুরি, গভীর-অগভির নলকূপের ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি, দিনেরবেলায় বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি, ভেরেন্ডি গ্রামে দিনেরবেলায় ডাকাতরা পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে হাতে ওয়ারলেস ও হ্যান্ডক্যাপসহ তল্লাসীর নামে একজনের বাড়ীতে ঢুকে ৩ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৮০ হাজার টাকা লুট করে।
ভূক্তভোগীরা বিভিন্ন সময়ে সিসিটিভি ফুটেজে অপরাধীদের চেহারা স্পষ্ট করে দিলেও পরবর্তীতে পুলিশ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেরাই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালণ করছেন। চরবাখরা গ্রামের জালাল উদ্দিন বলেন, আমরা নিজেদের যানমাল রক্ষার্থে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। আমরা সারাদিন মাঠে খেটে রাতে ঘুমাতে পারছিনা। ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। এটা পুলিশের দায়িত্ব, আমাদের নয়। থুপসারা গ্রামের টিম লিডার তাজুল ইসলাম বলেন, শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় আমাদের নিজেদেরকেই এখন জানমালের পাহারা দিতে হচ্ছে। চোর-ডাকাতরা আমাদের আরামের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।’
নওয়াপাড়া গ্রামের টিম লিডার আব্দুল ফকির বলেন, ‘গত কয়েক মাসে একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাই আর চুরির ঘটনা ঘটছে। অনেকেই থানায় গিয়ে অভিযোগ করে, কিন্তু কোনো লাভ হয় না। আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার চাই।’ উৎরাইল গ্রামের ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন চলবে ? প্রশাসনের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে জনগণ তো একসময় আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকবর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, এলাকায় যখন চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মত ঘটনা বৃদ্ধি পায়, তখন এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। পাশাপাশি ইউপি চেয়ারম্যানদের সহযোগীতায় গ্রামে গ্রামে পাহাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিছু অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।’
আমারবাঙলা/ইউকে